
নবাবগঞ্জে কোথায় কী দেখবেন: কলাকোপা জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আনসার ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, খেলারাম দাতার কোঠা, কলাকোপা কোকিলপাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, হরিহর ঘোষের বাড়ির তাজা গাছ, আদনান প্যালেস পার্ক, ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্ক, সরকারি দোহার নবাবগঞ্জ কলেজের শিক্ষক আবাসস্থল, রওশন গার্ডেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংগঠন ‘কলাকোপা স্পোর্টিং ক্লাব’ ও ‘তরঙ্গ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’র জীর্ণ টিনের ভবন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা সদরের এক কিলোমিটার দূরে, ঢাকা-বান্দুরা সড়কের পাশে কলাকোপা জজবাড়ি ও উকিলবাড়ি। বাড়ি দুটির নান্দনিক কারুকার্য দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। পাশেই রয়েছে জমিদার প্যারি মোহন সাহার বাড়ি, যা বর্তমানে কলাকোপা কোকিলপাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষক আবাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাস্তার ধারে সুবিশাল মাঠঘেরা বিদ্যালয়টি এতটাই গোছানো যে, যে কেউ এক নজর দেখতে চাইবেন। এ রাস্তার ধারে ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর বসে গ্রাম্য মেলা।
পেছনেই হরিহর ঘোষের বাড়ি, যেখানে রয়েছে মহামায়া মন্দিরের তাজা গাছ। কথিত আছে, সনাতন ধর্মীয় দেবী মহামায়ার স্বপ্নাদেশে কাঠ ব্যবসায়ী হরিহর ঘোষ গাছটি নিজ বাড়িতে স্থান দেন। উত্তর দিকে ইছামতী নদীর পাশ দিয়ে হাঁটলেই পাওয়া যাবে আনসার ভিডিপি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প। এখানে রয়েছে অন্তত ১৫টি পুরনো জমিদার বাড়ি ও একটি পিকনিক স্পট। চাইলে ক্যাম্পের ক্যান্টিনে বসে নদীর হাওয়ায় গরম চা উপভোগ করতে পারেন।
আনসার ক্যাম্পের পূর্ব দিকে কলাকোপা পুকুরপাড় গ্রামে রয়েছে ঐতিহাসিক খেলারাম দাতার কোঠা বা আন্ধারকোঠা। কথিত আছে, এটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো স্থাপনা, যা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অর্থায়নে সংস্কার করা হয়েছে।
আধুনিক বিনোদনের জন্য রয়েছে কলাকোপা আদনান প্যালেস পার্ক, ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্ক এবং কৈলাইলের রওশন গার্ডেন। শিশু-কিশোরদের জন্য আকর্ষণীয় এই পার্কগুলোতে রয়েছে নানা কারুকার্য। চাইলে নৌকায় চড়ে পুকুরে ঘুরতেও পারবেন।
আদনান প্যালেস পার্কের পাশেই রয়েছে শতবর্ষী ‘কলাকোপা স্পোর্টিং ক্লাব’ ও ‘তরঙ্গ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’র টিনশেড ভবন এবং সরকারি দোহার নবাবগঞ্জ কলেজের শিক্ষক আবাসন।
অন্যদিকে বান্দুরায় রয়েছে মুঘল আমলের ঐতিহাসিক ভাঙা মসজিদ, হাসনাবাদ, বক্সনগর, তুইতাল ও গোল্লায় রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের দৃষ্টিনন্দন গির্জা। জয়কৃষ্ণপুরের কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধের তিতপালদিয়া স্লুইস গেট এলাকা, আগলার মহাকবি কায়কোবাদের বাড়ি ও ঐতিহাসিক ‘আজান’ কবিতার সেই মসজিদটিও দর্শনীয়।
একটু ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার জন্য যেতে পারেন শ্রীনগর সীমান্তঘেঁষা চূড়াইনের খাহ্রা এলাকায়, যেখানে বন্যমূল বানরের আনাগোনা রয়েছে। তবে সাবধান—হাতে খাবার রাখবেন না, এতে বানরের আক্রমণের শিকার হতে পারেন।
দোহারে কোথায় কী দেখবেন: ‘মিনিকক্সবাজার’ খ্যাত মৈনট ঘাট, নারিশায় ডাকবাংলো ঘাট, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পাহাড় পার্ক বাড়ি।
মাহমুদপুর ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ে অবস্থিত মৈনট ঘাটে দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। এখানকার সূর্যাস্ত ও পদ্মার বুকজুড়ে স্পিডবোটে ভ্রমণ অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। তবে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরিধান করতে হবে। ৮ জনের জন্য আধঘণ্টার স্পিডবোট ভাড়া ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ঘণ্টায় ২০-২৫ জন ৫০০–১৫০০ টাকায় ঘুরতে পারেন।
পদ্মার জেগে ওঠা বালুচরে হাঁটাহাটি ও ঘাটের কাছাকাছি ছোট হোটেলে পদ্মার তাজা ইলিশ ভাজা খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। নারিশার পদ্মা তীরে রয়েছে দোহার উপজেলা ডাকবাংলো ও ঘাট। সাইনপুকুরের বেথুয়া গ্রামে রয়েছে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পাহাড় পার্ক বাড়ি—যেখানকার পরিবেশ মন ছুঁয়ে যায়।
ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন: গুলিস্তান থেকে কেরানীগঞ্জ হয়ে কলাকোপার দূরত্ব প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। যেতে চাইলে গোলাপশাহ মাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে নবকলি বা দোহার-নবাবগঞ্জ এক্সপ্রেস (এসি) বাসে উঠতে পারেন। ভাড়া জনপ্রতি ৮০–১২০ টাকা, সময় লাগবে দেড়–দুই ঘণ্টা। মৈনটঘাটে যেতে চাইলে মৈনট পরিবহনের বাসে উঠতে হবে, ভাড়া ১২০ টাকা। ব্যক্তিগত গাড়িতে গেলে সময় আরও কম লাগবে।
নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, “নবাবগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। তবুও পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।”
দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, “দোহারের মৈনট ঘাটে সবচেয়ে বেশি পর্যটক আসে। তাই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে।”
সানজানা