ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

প্রকাশিত: ০৩:০৮, ৬ জুন ২০২৫

ড. ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

ছবি: সংগৃহীত

 অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের আসন্ন যুক্তরাজ্য সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে একটি প্রশ্ন এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কি তার কোন সাক্ষাত হবে? যদিও সরকারিভাবে এমন কোন বৈঠকের কথা জানানো হয়নি, তবু এই সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে।

বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এ বিষয়ে স্পষ্ট করে জানান, প্রধান উপদেষ্টা তার যে কর্মসূচি উল্লেখ করেছেন সে অনুযায়ী এই বিষয়ে কোন তথ্য নেই। তবে লন্ডনে তারেক রহমানের উপস্থিতি এবং সেখানে প্রধান উপদেষ্টার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এ ধরনের একটি সাক্ষাৎ ঘটলে তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে। বিশেষত আগামী দিনের রাজনৈতিক মেরুকরণে এর প্রভাব কেমন হবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। যদিও এখনো তা নিছক একটি জল্পনা, তবু লন্ডনে থাকা অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা এবং তারেক রহমানের মধ্যে কোন রকম যোগাযোগ হয় কিনা, তা দেখার জন্য রাজনৈতিক মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস মর্যাদাপূর্ণ “কিং চার্লস হারমোনি অ্যাওয়ার্ড” গ্রহণ করতে আগামী ৯ জুন যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। ১০ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্যে অবস্থান করবেন। এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা ৯ জুন ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন এবং ১৪ জুন দেশে ফিরবেন। এই সফরে অধ্যাপক ইউনুস ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়াও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার চারমারের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সফরকালে তার আরও বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং থিংক ট্যাংক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়।

সফরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো রাজা তৃতীয় চার্লস কর্তৃক অধ্যাপক ইউনুসকে সম্মানজনক “হারমোনি অ্যাওয়ার্ড ২০২৫” প্রদান। এই পুরস্কার বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের আরো উন্নয়ন এবং সহযোগিতার প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পুরস্কারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ সম্মান।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিকভাবে ওই দুই দেশ একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দেশটির বৃহত্তম প্রবাসী জনগণের আবাসস্থল। প্রায় সাত লক্ষাধিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ যুক্তরাজ্যে বসবাস করে, যা দুই দেশের সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছে।

এই সফর দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরো গভীর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্রিটিশ বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রসারের উপর জোর দেয়া হবে।

এছাড়া সফরে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারের বিষয়ে উদ্যোগী হবেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন যে, প্রধান উপদেষ্টা তার যুক্তরাজ্য সফরের সময় পাচারকৃত অর্থ ও সম্পদ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করবেন। এই সফরে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে। অর্থপাচার বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা গেলে তা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ বিষয়ে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা প্রচেষ্টা চালাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই যুক্তরাজ্য সফর কেবল একটি পুরস্কার গ্রহণ বা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং এটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সফরে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক নির্দেশনা দেবে।

ফরিদ 

আরো পড়ুন  

×