ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডায়াবেটিসের কারণে ধীরে ধীরে অন্ধ হচ্ছেন? চোখ নষ্ট হওয়ার আগেই জেনে নিন এই ৫টি বিপজ্জনক লক্ষণ!

প্রকাশিত: ১৩:৩৪, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৩৫, ৩ জুন ২০২৫

ডায়াবেটিসের কারণে ধীরে ধীরে অন্ধ হচ্ছেন? চোখ নষ্ট হওয়ার আগেই জেনে নিন এই ৫টি বিপজ্জনক লক্ষণ!

ডায়াবেটিস এমন একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা শরীরের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি বা ইনসুলিন কার্যকরভাবে কাজ না করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এই উচ্চ রক্তশর্করা ধীরে ধীরে শরীরের প্রায় সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চোখ। নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস এক সময়ে চোখের অভ্যন্তরের সূক্ষ্ম অংশ রেটিনায় স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ডায়াবেটিসজনিত পাঁচটি গুরুতর চোখের সমস্যার কথা।

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি
ডায়াবেটিসজনিত চোখের সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ও বিপজ্জনক হলো ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। চোখের যে অংশটি আলো শনাক্ত করে এবং মস্তিষ্কে ছবি পাঠায়, সেই রেটিনার সূক্ষ্ম রক্তনালিগুলো উচ্চ রক্তশর্করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব রক্তনালি ফুলে যেতে পারে, তরল পদার্থ লিক করতে পারে বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উন্নত পর্যায়ে চোখে দুর্বল নতুন রক্তনালি তৈরি হয়, যেগুলো সহজেই ফেটে রক্তপাত ঘটাতে পারে এবং দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হতে পারে।

প্রথমদিকে এই রোগের তেমন লক্ষণ না-ও দেখা যেতে পারে, কিন্তু পরে ঝাপসা দেখা, চোখে ভেসে বেড়ানো কালো দাগ বা ফ্লোটারস দেখা দিতে পারে। চিকিৎসা না করালে এটি অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। যাদের দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে এবং যাঁদের রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা
রেটিনার কেন্দ্রীয় অংশ ম্যাকুলা আমাদের তীক্ষ্ণ ও বিস্তারিত দৃষ্টির জন্য দায়ী। ডায়াবেটিসের কারণে কখনো কখনো এই অংশে তরল জমে যায়, ফলে ম্যাকুলা ফুলে ওঠে, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক ম্যাকুলার এডিমা বা ডিএমই। এর ফলে মাঝখানের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা না করলে স্থায়ী দৃষ্টিহানির ঝুঁকি থাকে।

ডিএমই সাধারণত ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির রোগীদের মধ্যেই দেখা যায় এবং এটি ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের দৃষ্টিশক্তি হারানোর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে আধুনিক চিকিৎসায় লেজার থেরাপি বা ইনজেকশনের মাধ্যমে এই ফোলাভাব কমিয়ে আনা সম্ভব।

ছানিপড়া (ক্যাটার‍্যাক্ট)
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক আগে ছানি পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ছানিপড়া হলে চোখের স্বচ্ছ লেন্স ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যায়, যার ফলে দৃষ্টি হয়ে পড়ে ঘোলাটে ও অস্পষ্ট। উচ্চ রক্তশর্করা লেন্সের প্রাকৃতিক গঠনে পরিবর্তন এনে ছানি পড়ার গতি বাড়িয়ে দেয়।

এতে রোদের ঝলকানিতে চোখে সমস্যা হতে পারে, রাতের বেলা স্পষ্টভাবে দেখতে অসুবিধা হয়। যদিও ছানি পড়া বার্ধক্যে স্বাভাবিক ঘটনা, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তা বেশি তাড়াতাড়ি ঘটে। সুখবর হলো, ছানি অপসারণে অস্ত্রোপচার অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর, যা দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।

গ্লুকোমা
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের গ্লুকোমার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। গ্লুকোমা হলো এক ধরনের চোখের রোগ, যা চোখ থেকে মস্তিষ্কে সংযোগস্থাপনকারী অপটিক নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষ করে নিউভাসকুলার গ্লুকোমা নামক এক ধরনের গ্লুকোমা ডায়াবেটিসে বেশি দেখা যায়, যেখানে চোখের রঙিন অংশ আইরিসে নতুন ও অস্বাভাবিক রক্তনালি জন্ম নেয়। এই রক্তনালিগুলো চোখের তরল নিঃসরণ বন্ধ করে চোখের চাপ বাড়িয়ে দেয় এবং অপটিক নার্ভের ক্ষতি করে।

গ্লুকোমা প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো উপসর্গ দেখায় না। তাই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানোই একমাত্র উপায়, যাতে সময়মতো ধরা পড়ে এবং দৃষ্টিশক্তি বাঁচানো যায়।

রেটিনাল ডিটাচমেন্ট
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির উন্নত পর্যায়ে চোখের ভেতরে দাগ বা স্কার টিস্যু তৈরি হয়। এই দাগ কখনো কখনো রেটিনাকে চোখের পেছনের অংশ থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে পারে, যাকে বলে রেটিনাল ডিটাচমেন্ট। এর ফলে হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি লোপ পেতে পারে এবং এটি একটি জরুরি চিকিৎসাজনিত অবস্থা।

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেলে রেটিনাল ডিটাচমেন্ট স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। চোখ বাঁচাতে প্রায়ই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।

কেন ডায়াবেটিকরা চোখের জটিলতায় বেশি আক্রান্ত হন?
উচ্চ রক্তশর্করা শরীরের রক্তনালিগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। চোখেও এই প্রভাব পড়ে। নিয়মিতভাবে রক্তশর্করা নিয়ন্ত্রণে না রাখা, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপান ও দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস থাকার ফলে চোখের সমস্যার ঝুঁকি আরও বাড়ে। অনেকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে থেকেই চোখের ক্ষতিতে ভোগেন, কারণ রোগটি ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং প্রাথমিকভাবে লক্ষণহীন থাকে।


চোখের সমস্যাগুলো যদি সময়মতো ধরা পড়ে, তবে ডায়াবেটিসজনিত দৃষ্টিহানির ঝুঁকি অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য ডায়াবেটিস রোগীদের বছরে অন্তত একবার ডায়াবেটিক আই এক্সাম করানো উচিত। মনে রাখবেন, দৃষ্টিশক্তি একবার চলে গেলে আর ফিরে আসে না, তাই আগেভাগেই সচেতন থাকাই হবে সর্বোত্তম প্রতিরক্ষা।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4xbcxmn

আফরোজা

×