ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লোহিত সাগর ছেড়ে পালিয়েছে মার্কিন রণতরী

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:০৯, ৫ জুন ২০২৫

লোহিত সাগর ছেড়ে পালিয়েছে মার্কিন রণতরী

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে যুদ্ধের আতঙ্ক। হুথি বিদ্রোহীদের সামরিক হুঁশিয়ারি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক হামলার প্রেক্ষাপটে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।

মঙ্গলবার ইয়েমেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মেজর জেনারেল মোহাম্মদ নাসের আল আতিফী এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের সামনে পরাজিত হয়েছে। তারা তাদের বিমানবাহীর রণতরীগুলোর আধিপত্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আতিফীর দাবি অনুযায়ী, ইয়েমেন তাদের ধারাবাহিক সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আমেরিকান আক্রমণ ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং মার্কিন নৌবহরগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ জলপথ থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আমেরিকান আগ্রাসন রুখে দিয়েছি। এখন তারা তাদের বিমানবাহী রণতরী গুটিয়ে নিচ্ছে। এটি শুধু একটি সামরিক জয় নয় বরং আধুনিক যুদ্ধে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

সাম্প্রতিক এক ঘটনায় মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন লোহিত সাগরের জলসীমা থেকে সরে গেছে। এই রণতরী ইয়েমেনের নৌবাহিনীর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়। এই ঘটনাকে ইয়েমেনের প্রতিরোধশক্তির একটি কৌশলগত সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সানার সঙ্গে যুদ্ধবিরোতিতে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছে ইয়েমেন। গত মাসে এই যুদ্ধবিরোতির ঘোষণা আসার পর থেকে মার্কিন সামরিক হামলা বন্ধ রয়েছে।

অপরদিকে, হুথি নেতৃত্বাধীন ইয়েমেন সেনাবাহিনী ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক অভিযান জোরদার করেছে। তারা জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকেই তারা নিয়মিতভাবে ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার আবারও ‘ফিলিস্তিন-টু’ নামের একটি হাইপারসোনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় ইসরাইলের বেনগুরিয়ন বিমানবন্দরের দিকে। ইয়েমেন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, হামলাটি সফল হয়েছে এবং বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যায় এবং টানা দ্বিতীয় দিনের মতো একটি মার্কিন সামরিক কার্গো বিমান সেখানে নামতে পারেনি।

এই হামলা শুধু ইসরাইলের জন্য সাময়িক বিঘ্ন নয়, বরং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের ওপরও এর প্রভাব পড়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন ইতিমধ্যে বেনগুরিয়ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট স্থগিত করেছে।

ইয়েমেন আরও জানিয়েছে, তারা ইসরাইলমুখী নৌপথ ও আকাশপথে পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। গত ৪ মে থেকে তারা ঘোষণা দেয়, নিয়মিত হামলার মাধ্যমে তারা ইসরাইলের বিমানবন্দরগুলো অকার্যকর করে তুলবে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী আতিফী বলেন, ইয়েমেন এখন দিনে বা রাতে, যেকোনো সময় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাতে সক্ষম। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নিজস্ব প্রযুক্তির উন্নয়ন করেছি। আমরা এখন আরো নিখুঁত, দূরপাল্লার এবং বড় ধ্বংসক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করতে পারি।

তিনি বলেন, আমাদের হাতে এখন এমন সব প্রতিরোধ প্রযুক্তি আছে যা আগে ছিল না। এই যুদ্ধ আমাদের আরো শক্তিশালী করেছে।

সবশেষে, ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, যতদিন ইসরাইল গাজার ওপর আগ্রাসন চালাবে, ততদিন ইয়েমেনের প্রতিরোধ থামবে না। অপরাধী শত্রুরা ইয়েমেন থেকে পাবে না কিছুই— শুধু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন পাবে গণহত্যার প্রতিবাদে।

ফরিদ

×