
ছবি: সংগৃহীত
গত বছর লিস্টার শহরে কুকুর হাঁটাতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়া এক ৮০ বছর বয়সী ভারতীয় বংশোদ্ভূত বৃদ্ধকে হত্যার দায়ে এক ১৫ বছর বয়সী কিশোরকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই ঘটনায় ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে হামলার ভিডিও ধারণ এবং উৎসাহ দেওয়ার অপরাধে তিন বছরের যুব পুনর্বাসন আদেশ এবং ছয় মাসের কার্ফিউ দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইংল্যান্ডের লিস্টার শহরের একটি পার্কে কুকুর হাঁটাতে গিয়ে হামলার শিকার হন ভীম সেন কোহলি নামের ওই বৃদ্ধ। এই হামলার দায় স্বীকার করে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ১৩ বছর বয়সী ওই কিশোরী, যে মোবাইল ফোনে হামলার ভিডিও ধারণ করেছিল এবং হাসছিল, তাকে তিন বছরের যুব পুনর্বাসন আদেশ এবং ছয় মাসের কার্ফিউ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঘটেছিল।
বৃহস্পতিবার লিস্টার ক্রাউন কোর্ট থেকে প্রচারিত একটি টেলিভিশন শুনানিতে বিচারক মার্ক টার্নার এই দণ্ড ঘোষণা করেন। তিনি কোহলির ওপর হামলাকে "ভীরু" এবং "মন্দ" বলে অভিহিত করেন। কিশোরটি কোহলিকে জাতিগতভাবে গালাগাল করার পর স্যান্ডেল দিয়ে তার মুখে আঘাত করে।
যেহেতু উভয় অভিযুক্তই অপ্রাপ্তবয়স্ক, তাই আইনি কারণে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বিচারক উল্লেখ করেছেন যে, রায় নির্ধারণ করার সময় তাদের বয়স বিবেচনা করা আইনিভাবে আবশ্যক ছিল। উভয়কেই হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পিটিআই সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে জুরি কিশোরটিকে (D1 হিসেবে উল্লিখিত) কোহলিকে ঘুষি মারা ও লাথি মারার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং কিশোরীটিকে (D2 হিসেবে উল্লিখিত) হামলা ধারণ ও উৎসাহ দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে।
বিচারক টার্নার কিশোরটিকে বলেন, "তুমি একজন বয়স্ক মানুষের ওপর ভীরু আক্রমণ করেছ।" কিশোরীটিকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন যে, একটি কারাদণ্ড "উপকারের চেয়ে বেশি ক্ষতি" করবে। তাই তিনি তিন বছরের যুব পুনর্বাসন আদেশের অংশ হিসেবে তার উপর কঠোর শর্ত আরোপ করেন, যার মধ্যে ছয় মাসের কার্ফিউও অন্তর্ভুক্ত।
১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬:৩০ টার দিকে একটি পার্কের কাছে এই হামলা ঘটে। লিস্টার নিবাসী কোহলি ঘটনার একদিন পর হাসপাতালে মারা যান।
কোহলির লিস্টার শহরে জাম্পার এবং কার্ডিগান তৈরির একটি কারখানা ছিল, তবে তিনি বহু বছর আগে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। কোহলির প্রতিবেশী দীপ কাইলা জানান, তিনি দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং দুই নাতি রেখে গেছেন, যারা সবাই প্রাপ্তবয়স্ক।
কোহলির পরিবারের বিবৃতি
রায় ঘোষণার পর, নিহত কোহলির মেয়ে সুসান কোহলি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেন। তিনি তার বাবাকে তার মায়ের জন্য ৫৫ বছর ধরে একজন নিবেদিতপ্রাণ সঙ্গী এবং একজন প্রেমময় বাবা, দাদা, ভাই ও চাচা হিসেবে উল্লেখ করেন।
সুসান বলেন, "বাবা যে ভয়াবহতার শিকার হয়েছিলেন, তা আমাদের মন থেকে কখনও যাবে না। আমরা সেই কিশোর-কিশোরীদের প্রতি ক্রোধ ও ঘৃণা অনুভব করি যারা বাবাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তারা একজন ৮০ বছর বয়সী মানুষকে অপমান করেছে, আক্রমণ করেছে, ভিডিও করেছে এবং তাকে নিয়ে হেসেছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা প্রতিদিন যে ব্যথা অনুভব করি, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না, এবং এই বিচার চলাকালীন তা আরও বেড়ে গেছে।"
কিশোরীর ফোন থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ, যার মধ্যে কোহলির উপর হামলার মর্মান্তিক ফুটেজও ছিল, জুরির সামনে উপস্থাপন করা হয়। পিটিআই জানিয়েছে, কিশোরটি সাক্ষীদের কাছে স্বীকার করেছে যে সে ওই বৃদ্ধকে আক্রমণ করেছিল এবং পরে একজন সমাজকর্মীকে লেখা একটি চিঠিতে তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে।
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের সিনিয়র ডিস্ট্রিক্ট ক্রাউন প্রসিকিউটর কেলি ম্যাথিউস হামলার আগে ও পরের সিসিটিভি ফুটেজ উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে বন্ধুদের সাথে হামলা নিয়ে তাদের মজা করার অডিও ছিল। রায় ঘোষণার পর তিনি বলেন, "আমরা এই বিচারে দেখিয়েছি যে এই তরুণ আসামীরা একজন নিরপরাধ মানুষের উপর বিনা প্ররোচনায় আক্রমণে মিস্টার কোহলির মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। তারা ঘটনাটির ভিডিও করেছিল এবং পরে হাসাহাসি ও গর্ব করেছিল।
সাব্বির