
ছবি: সংগৃহীত
“ঈদ আসছে, মানুষ ঘরে ঘরে আনন্দ করছে। আর আমার ছেলেরা ভাতও পায় না! তিন বেলা তিন মুঠো খাওয়ার মতো চাল নেই। তরকারি কিনতে পয়সা নাই। বাতাস এলেই উড়ে যেতে চায় আমার প্লাস্টিকের ঘর! বৃষ্টিতে ঘরের ভেতর পানি পড়ে, ছেলেটা ঘুমাতে পারে না।”—কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনই করুণ বাস্তবতার কথা বলছিলেন লালমনিরহাটের হাজেরা বেগম।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারি ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী এলাকায় বাঁশঝাড়ের নিচে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো এক ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন বৃদ্ধা হাজেরা বেগম। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে এটুকুই তার সম্বল। পরিত্যক্ত বাঁশের কঞ্চি দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে রাখা পলিথিনের এই ঘরটিও বাতাস বা বৃষ্টির মুখে টিকতে পারে না।
বছর কয়েক আগে স্বামী জোবেদ আলী মারা যাওয়ার পর থেকে ছোট ছেলে হিমেল (১২) কে নিয়ে ওই ঝুপড়িতেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। অভাবের তাড়নায় বড় ছেলে ঢাকায় মানুষের বাড়িতে কাজ করেন।
সরকার ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দিলেও হাজেরা বেগমের ভাগ্যে জোটেনি একটি নিরাপদ আশ্রয়। ঈদের পরেই জমির মালিক জায়গা ছাড়তে বলেছে। কোথায় যাবেন—এই দুশ্চিন্তায় ঘুম আসে না বৃদ্ধার চোখে।
বয়সের ভারে কোনো কাজ করতে পারেন না হাজেরা। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল-ডাল সংগ্রহ করে কোনো রকমে জীবন চলে। বিদ্যুৎ না থাকায় এখনো কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে রাত কাটে তার। একটু বাতাস এলেই নিভে যায় সেই কুপির আলো।
প্রতিবেশী খাইরুল হোসেন বলেন, “অনেক বছর ধরে হাজেরা বেগম পলিথিনের ছাউনি দিয়ে কোনোরকমে বসবাস করছেন। ঘরটি এতই দুর্বল যে হালকা বাতাসেই উড়ে যেতে চায়। সরকার যদি তাকে একটি ঘর করে দিতো, তাহলে খুব ভালো হতো।”
আরেক প্রতিবেশী সাইফুল মিয়া জানান, “বহু বছর আগে হাজেরার স্বামী মারা গেছেন। খুব কষ্ট করে সন্তানদের নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। সবাই যদি একটু সহযোগিতা করে, তার অনেক উপকার হবে।”
হাজেরা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, “ঈদের পর জমির মালিক জায়গা ছেড়ে দিতে বলেছে। দুই ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাব—এই চিন্তায় ঘুমাইতে পারি না। শুনছি সরকার ১০ কেজি করে চাল দিছে, সবাই পাইছে, আমি পাই নাই। সরকার যদি দুই শতক জায়গা দিত, একটা ঘর বানায় বাচ্চাগো লইয়া থাকতি পারতাম।”
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা বলেন, “হাজেরা বেগমের বিষয়টি জানার পর তাকে ৬ হাজার টাকা এবং দুই বান্ডিল ঢেউটিন দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
প্রয়োজনে এটি আরও সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ করে নেওয়া যেতে পারে। যদি আপনি কোনো নির্দিষ্ট পত্রিকা বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য এটি প্রস্তুত করতে চান, আমি সেই অনুযায়ী সহায়তা করতে পারি।