ছবিঃ সংগৃহীত
আলঝেইমার একটি প্রগতিশীল স্নায়বিক রোগ, যা স্মৃতি, চিন্তাশক্তি এবং আচরণকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে চলমান গবেষণা ও উন্নয়ন সম্পর্কে জানা এখন সময়ের দাবি।
আলঝেইমার বনাম ডিমেনশিয়া
চিকিৎসকদের মতে, আলঝেইমার এবং ডিমেনশিয়া এক নয়। ডিমেনশিয়া একটি বিস্তৃত উপসর্গের সমষ্টি, যেখানে স্মৃতিভ্রংশ, মানসিক বিভ্রান্তি ও আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। আর আলঝেইমার হলো ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ, যা এসব উপসর্গের মূল কারণ।
মূল কারণ: বিষাক্ত প্রোটিন
গবেষণায় উঠে এসেছে, মস্তিষ্কে অ্যামিলয়েড এবং টাউ নামের দুটি প্রোটিন জমা হয়ে আলঝেইমার সৃষ্টি করে। এই প্রোটিনগুলো নিউরনের ক্ষতি করে এবং স্নায়বিক বার্তা আদান-প্রদানে বাধা সৃষ্টি করে, যার ফলে রোগীর স্মৃতি ও বোধশক্তির অবনতি ঘটে।
লক্ষণ ও অগ্রগতি
আলঝেইমারের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় সাম্প্রতিক ঘটনা ভুলে যাওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা, বিভ্রান্তি এবং পরিচিত পরিবেশে দিক হারিয়ে ফেলা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপসর্গগুলো তীব্র হয়, এবং রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
চিকিৎসার বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে এই রোগের কোনো নিরাময় নেই। তবে কিছু ওষুধ রয়েছে যা উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব ওষুধ রোগের গতি থামাতে না পারলেও স্মৃতিভ্রংশ ও আচরণগত সমস্যা কিছুটা হ্রাস করতে পারে।
গবেষণায় নতুন সম্ভাবনা
২০২৫ সালের জন্য ১৮২টি ক্লিনিকাল ট্রায়াল নির্ধারিত হয়েছে আলঝেইমারের ওষুধ উন্নয়নে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ১৩৮টি সম্ভাব্য ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা চলছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এক-তৃতীয়াংশ ওষুধ অন্যান্য রোগ যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে আগে। এসব গবেষণা চিকিৎসাক্ষেত্রে আশাবাদ সৃষ্টি করছে।
প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এনে আলঝেইমারের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস, মানসিক উদ্দীপনা, সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে ঝুঁকি অনেকটাই কমানো যায়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আলঝেইমার সম্পর্কে সচেতনতা ও গবেষণার অগ্রগতি ভবিষ্যতে রোগটির আরও কার্যকর চিকিৎসা ও প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
পৃথী
