ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চরবাসীর বর্ষাকালীন দুর্ভোগ, ছোট ডিঙি নৌকাই একমাত্র ভরসা

মোঃ শাহীন আলম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৬ জুন ২০২৫

চরবাসীর বর্ষাকালীন দুর্ভোগ, ছোট ডিঙি নৌকাই একমাত্র ভরসা

ছবি: জনকণ্ঠ

বর্ষা এলেই সীমাহীন দুর্ভোগ নেমে আসে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চর-সোনাইকাজী গ্রামের বাসিন্দাদের জীবনে। চারদিকে নদ-নদীর পানিতে ঘেরা এই চরে প্রায় ৮০টি পরিবার বসবাস করে। বর্ষাকালে ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর পানি বাড়লে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।

স্থানীয়দের চলাচলের একমাত্র উপায় হয়ে ওঠে ছোট ডিঙি নৌকা। যাদের নিজস্ব নৌকা নেই, তাদের মাঝিকে গুনতে হয় ৫ টাকা পর্যন্ত। কোনো কোনো সময় মাঝির মানবিকতায় বিনা ভাড়াতেও পারাপার হয় অনেকে।

১০৩ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা অরিচ মিয়া বলেন, “কি কমু বাহে! বর্ষা মৌসুমে ধরলা-বারোমাসিয়া নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় হামার দুঃখের শ্যাষ নেই।”

তিনি জানান, প্রতি বছর বর্ষায় ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়, ছোট শিশুদের নিয়ে বিপাকে পড়ে যান সবাই। রান্নাবান্না, বাথরুমসহ ন্যূনতম প্রয়োজনীয় কাজও পানির কারণে কঠিন হয়ে পড়ে।

স্থানীয় গৃহবধূ মর্জিনা বেগম বলেন, “বন্যার সময় পুরুষদের তুলনায় নারীদের কষ্টটা অনেক বেশি। রান্না, সন্তানদের নিরাপত্তা—সবকিছু একাই সামাল দিতে হয়। ঘরভর্তি পানি আর কাদার মধ্যে জীবনযাপন অসহনীয়।”

এই দুর্ভোগ থেকে বাদ পড়েনি শিশুরাও। শিক্ষার্থী লাবন মিয়া ও আখি আক্তার জানায়, “স্কুল বন্ধ থাকায় এখন একটু স্বস্তি। কিন্তু স্কুল খুললেই ঝামেলা শুরু হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনা করতে হয় কুপির আলোয়।”

এদিকে, এলাকার একমাত্র নৌকার মাঝি তৈয়ব আলী বলেন, “সবাই আমার নৌকাতেই পারাপার হয়। কেউ ৫ টাকা দেয়, কেউ দেয় না। তবুও মানুষকে নামিয়ে দেই। যদি একটা বাঁশের সাঁকো থাকত, তাহলে সবাই একটু স্বস্তি পেত।”

চরের বাসিন্দারা দাবি করেছেন, বর্ষাকালের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরি ভিত্তিতে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ ও বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

মুমু

×