
উত্তরবঙ্গের অন্যতম খ্যাতনামা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সমাজসেবক ডা. বিপুল চন্দ্র রায় (৬৮) আর নেই। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বগুড়ার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই বরেণ্য চিকিৎসক।
আজ শুক্রবার (৬ জুন) সকালে গাবতলী উপজেলার আমতলী মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাঁর মৃত্যুতে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পাবনা সরকারি হাসপাতালসহ দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতালে এবং সবশেষ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ডা. রায়।
অবসরের পর বগুড়ার চেলোপাড়ায় নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন ‘অরবিন্দু চক্ষু আই কেয়ার’ নামের একটি মানবিক চিকিৎসাকেন্দ্র, যা অল্প সময়েই সাধারণ মানুষের আস্থার স্থানে পরিণত হয়।
চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তিনি ছিলেন সমাজসেবক ও আধ্যাত্মিক চিন্তানায়ক। তাঁর উদ্যোগেই গড়ে ওঠে ‘শ্রীঅরবিন্দ মীরা শক্তিপীঠ’ এবং ‘মাতৃ সরোবর’ যা এখন বগুড়াবাসীর কাছে এক পবিত্র তীর্থভূমি। ২০১৭ সালে এই আধ্যাত্মিক মিলনস্থলের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমের চেয়ারপারসন তারা জৌহরসহ দেশ-বিদেশের বহু আধ্যাত্মিক অনুরাগী।
‘মাতৃ সরোবর’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হয়েছে মন্দির, গ্রন্থাগার, হাসপাতাল, ধ্যানকেন্দ্র ও সৌন্দর্যবর্ধিত সরোবর। সম্পূর্ণ ব্যয়ভার তিনি নিজেই বহন করেছেন। তাঁর প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাব তাঁকে সকল ধর্ম, জাতি ও শ্রেণির মানুষের কাছে আপন করে তুলেছিল। এ নিয়ে ২০১৭ সালে তৎকালীন রিপোর্টার সমুদ্র হকের লেখায় দৈনিক জনকণ্ঠে একটি সুন্দর ফিচার নিউজ প্রকাশিত হয়েছিল।
তবে জীবনের শেষদিকে তাঁকে নানা ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হয়। মিথ্যা অভিযোগ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়রানির শিকার হয়ে মানসিক দুঃসময় পার করেন তিনি। পরে সত্য উদ্ঘাটিত হলে তিনি পুনরায় সামাজিক মর্যাদা ফিরে পান।
ডা. রায়ের মৃত্যুতে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়েছে ‘অরবিন্দু চক্ষু আই কেয়ার’-এর একঝাঁক তরুণ-তরুণী কর্মী। তাঁদের একমাত্র জীবিকা ছিল এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকা। এখন প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
মৃত্যুকালে ডা. বিপুল চন্দ্র রায় রেখে গেছেন তাঁর বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই ভাই এবং চার বোন।
তাঁর মৃত্যু শুধু চিকিৎসা জগতের নয়, উত্তরবঙ্গের সমাজজীবনের এক অপূরণীয় ক্ষতি। “আপনার মতো মানুষ প্রকৃত অর্থে মরেন না—আপনার সৃষ্টি আর স্মৃতি আমাদের মধ্যে চিরজাগরূক থাকবে।” এভাবেই তাঁকে স্মরণ করছেন তাঁর সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
সানজানা