
সংগৃহীত
অজান্তেই অনেক মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারান একজন হাসিখুশি, সুস্থ ব্যক্তি হঠাৎ করে মারা যান। আশেপাশে এমন ঘটনা প্রায়ই শোনা যায় কেউ ঘুমের মধ্যে আর জেগে উঠলেন না, কেউ সিজদায় গিয়েই চিরবিদায় নিলেন, কিংবা হঠাৎ বুকে ব্যথা নিয়ে পড়ে গেলেন এবং আর উঠে দাঁড়ালেন না।
এই ধরনের মৃত্যু আমাদের কাছে যতটা আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত মনে হয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণে তা নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে থাকে একাধিক শারীরবৃত্তীয় ব্যর্থতা বিশেষত হৃদ্যন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং শ্বাসযন্ত্রের ত্রুটি।
এই প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয়েছে এমন কয়েকটি স্বাস্থ্যগত জটিলতা নিয়ে, যেগুলো অতি স্বল্প সময়ে প্রাণনাশের কারণ হতে পারে এবং যেগুলোর পূর্বলক্ষণ জেনে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া সম্ভব।
হৃদ্রোগ
মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে হৃৎপিণ্ড। হৃৎপিণ্ড ঠিকভাবে কাজ করতে হলে নিয়মিতভাবে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ দরকার। রক্ত সরবরাহকারী ধমনীতে যদি বাধা সৃষ্টি হয়, হার্টে রক্ত না পৌঁছালে হার্ট অ্যাটাক ঘটে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, হঠাৎ মৃত্যু প্রধানত দুটি কারণেই হয়ে থাকে কার্ডিয়াক (হৃদ্সংক্রান্ত) বা রেস্পিরেটরি (শ্বাসপ্রশ্বাসসংক্রান্ত) ব্যর্থতা।
হৃদ্যন্ত্রের পেশি যদি অকার্যকর হয়ে যায়, হৃৎস্পন্দন থেমে যায় বা ধমনীতে ব্লকেজ হয়, তাহলেও তাৎক্ষণিক মৃত্যু হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, হার্ট অ্যাটাকের পর প্রথম কয়েক মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে CPR (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দেওয়া গেলে রোগীর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের কিছু পূর্বলক্ষণ:
- বুকের মাঝ বরাবর চাপ বা ব্যথা
- কাশি বা শ্বাসকষ্ট
- বমি বা বমি বমি ভাব
রেস্পিরেটরি ফেইলিউর
শ্বাসপ্রশ্বাসে কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি বা কার্বন ডাই-অক্সাইড জমে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হয়, যাকে বলা হয় রেস্পিরেটরি ফেইলিউর। এটি দ্রুত চিকিৎসা না পেলে প্রাণঘাতী হতে পারে।
প্রাথমিক লক্ষণগুলো:
- শ্বাসকষ্ট বা হাওয়া কম পাওয়া
- ঠোঁট বা আঙুল নীল হয়ে যাওয়া
- ক্লান্তি, বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হওয়া
- অতিরিক্ত ঘাম, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া
ডা. আজাদ বলেন, এই ধরনের সমস্যায় “প্রতিটা মুহূর্তই মূল্যবান।” তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে রোগীকে মাত্র ৬ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।
পালমোনারি এম্বোলিজম
ফুসফুসের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধলে তাকে বলা হয় পালমোনারি এম্বোলিজম, যা দ্রুত চিকিৎসা না হলে মারাত্মক হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে নামাজের সময় সিজদায় গিয়ে কেউ পড়ে গেলে এবং মারা গেলে এটি হয়ে থাকতে পারে পালমোনারি এম্বোলিজমের ফল।
লক্ষণ:
- হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট
- বুক বা পিঠে তীব্র ব্যথা
- অতিরিক্ত ঘাম, দুশ্চিন্তা, অজ্ঞান হওয়া
ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, পূর্বের হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে এবং বয়স বেশি হলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
স্ট্রোক
স্ট্রোক সাধারণত ঘটে যখন মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা কোনো রক্তনালী ফেটে যায়। এতে মস্তিষ্কের কোষ মারা যেতে শুরু করে এবং দ্রুত চিকিৎসা না হলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণ:
- শরীরের একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া
- কথা জড়িয়ে যাওয়া বা বলা বন্ধ হয়ে যাওয়া
- হঠাৎ প্রচণ্ড মাথাব্যথা
- চোখে অন্ধকার দেখা, ভারসাম্য হারিয়ে মরে যাওয়া
স্ট্রোক দেখা দিলে সাথে সাথে রোগীকে পাশে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে এবং জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
এই ধরনের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর মূল কারণগুলোর প্রতিরোধে প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন।
ডা. আজাদ বলেন, “একবার যে-সব শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়, সেগুলো বারবার হতে পারে। তাই সময়মতো শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করাটা জরুরি।”
সতর্কতামূলক কিছু পরামর্শ:
- সুশৃঙ্খল জীবনধারা অনুসরণ
- সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়াম
- ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ শেষ মুহূর্তে নয়, সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে।
হ্যাপী