
ছবিঃ সংগৃহীত
ডায়েট করতে গিয়ে যদি অত্যধিকভাবে ক্যালোরি কমানো হয়, তাহলে তা মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে — এমনই তথ্য উঠে এসেছে একটি নতুন গবেষণায়।
মঙ্গলবার প্রকাশিত BMJ Nutrition, Prevention & Health জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি জরিপের (NHANES) তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেখানে ২৮,০০০-এর বেশি প্রাপ্তবয়স্কের খাদ্যাভ্যাস ও হতাশাজনিত উপসর্গ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ক্যালোরি সীমিত ডায়েট অনুসরণ করছিলেন — বিশেষ করে পুরুষ এবং যাদের বডি মাস ইনডেক্স (BMI) অতিরিক্ত ওজনের মধ্যে পড়ে — তাদের মধ্যে হতাশার উপসর্গ বেশি ছিল।
খাদ্যের গুণগত মান গুরুত্বপূর্ণ
শুধু ক্যালোরি নয়, খাদ্যের মানও বড় একটি ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা যায়, যারা বেশি পরিমাণে অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও মিষ্টি খাচ্ছেন, তাদের হতাশা বেশি। অন্যদিকে, যারা ভূমধ্যসাগরীয় ধরনের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করছেন, তাদের হতাশার ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।
গবেষকের সতর্কবার্তা
গবেষণার প্রধান লেখক ডা. ভেঙ্কট ভাট, যিনি কানাডার সেন্ট মাইকেল’স হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, বলেন, "অতিরিক্ত সীমাবদ্ধ ও অসমতা পূর্ণ খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ করে যারা ওজন নিয়ে মানসিক চাপে আছেন, তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।"
তিনি বলেন, "সুস্থ, পরিমিত ও টেকসই খাদ্যাভ্যাস বেছে নেওয়া উচিত, যাতে পুষ্টির ঘাটতি না হয় এবং মানসিক প্রভাবও বিবেচনায় নেওয়া হয়।"
আগের গবেষণার সঙ্গে ভিন্ন ফলাফল
এই গবেষণার ফলাফল কিছু আগের গবেষণার সঙ্গে ভিন্ন। আগের কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যালোরি-সীমিত ডায়েট হতাশা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে আগের গবেষণাগুলোর অধিকাংশই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ছিল।
গবেষণার সীমাবদ্ধতা
উল্লেখ্য, এই গবেষণা কেবল একটি সম্পর্ক নির্দেশ করে, কারণ-প্রভাব নয়। এছাড়া, অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই তাদের খাদ্যাভ্যাস জানিয়েছেন, যা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ উটাহ-র পুষ্টি ও ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কেরি উডরাফ বলেন, "অনেকেই ভাবেন তারা ক্যালোরি কমাচ্ছেন, কিন্তু হয়তো আসলে অতিরিক্ত খাচ্ছেন। অংশগ্রহণকারীদের প্রকৃত ক্যালোরি গ্রহণ যাচাই করার সুযোগ ছিল না।"
কেন ক্যালোরি সীমিত ডায়েট হতাশা বাড়াতে পারে?
ডা. জোহান্না কিলার, কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষক, বলেন, "যদি ক্যালোরি কমানো হলেও ওজন না কমে বা বারবার ওজন ওঠা-নামা করে, তাহলে হতাশা বেড়ে যেতে পারে। এতে ব্যক্তি নিরুৎসাহিত বা হতাশ হয়ে পড়েন।"
তিনি আরও বলেন, ক্যালোরি অত্যধিক কমানো হলে দেহে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে, যার ফলে ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা ও মনোযোগ কমে যাওয়া দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে, চরম ডায়েট মানসিক উদ্বেগ ও খাওয়া-সংক্রান্ত ব্যাধির ঝুঁকি বাড়ায়।
সমাধান: ব্যালান্স ও পেশাদার পরামর্শ
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের দেহ এবং মানসিক প্রতিক্রিয়া ভিন্ন, তাই ডায়েট শুরু করার আগে চিকিৎসক বা রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উত্তর ক্যারোলিনার ডায়েটিশিয়ান নাটালি মোকারি বলেন, "ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খাওয়া শুরু করুন — প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফল-সবজি যেন প্লেটে থাকে। ধীরে ধীরে খেলে দেখা যাবে, অতিরিক্ত খাবার বা মিষ্টির প্রতি আগ্রহ কমে গেছে।"
শেষ কথা হিসেবে ডা. উডরাফ বলেন, "ওজন কমুক বা না কমুক, খাদ্যের গুণমান উন্নত করা জীবনমান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।"
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন
নোভা