
ছোট বেলায় ঈদের বিশাল আনন্দ ছিল। ১৫ দিন আগে থেকে ঘর লেপা-পোছা, জানালার পর্দা, বিছানার চাদর ধোয়া, কোঠার ওপর থেকে বড় বড় হাঁড়ি-পাতিল নামিয়ে মেজে-ঘষে ঝকঝকে করা, আলমারি থেকে বই নামিয়ে রোদে দেয়া, বইয়ের পৃষ্ঠার ভাঁজে ভাঁজে নিমপাতা আর শাড়ির ভাঁজে নেপথালিন গোঁজা ছিল দারুণ এক কাজ। ঢেঁকির পাড় লেপা, চুলার ঝিক এ মাটি লাগিয়ে তর তরে করে ফেলা, ঘরের ঝুল ঝাড়া, আসবাবপত্র সব জেট গুলে ধোয়া। তারপর শুকনা কাপড়ে মোছা। শোকেসের সব জিনিস নামিয়ে ধুয়ে, মুছে আবার গুছিয়ে রাখা। ঘরের এমন কোনো কোণা কাঞ্চি নেই যেখানে ঝাড়ু পৌঁছাবে না। এরপর হ্যাজাক হারিকেনের তদারকি। পিতলের দম দেয়া কেরোসিনের চুলার ঝাড় মোছ। যদি বৃষ্টি আসে তবে তো লাকড়ির চুলায় রান্না হবে না। এমনি হাজার হাজার টুকিটাকি কাজ রোজকার সবাইকে ঈদ ঈদ অনুভূতি এনে দিত। শিল পাটায় ধার কাটা, কাঁচি-বঁটি-দা এর যত্ন নেয়া। দরজা-জানালার ধুলা মরিচার বিদায়। এক দৌড়ে বাইরে যেতাম। আর তারপর আবার বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখতাম সব কিছু কেমন অচেনা সুন্দর হয়ে গেছে! আর নতুন এক সোঁদা সুগন্ধে চারদিক ম-ম করছে। গোয়াল ঘরেও নেই কোনো গো-চানার চিহ্ন মাত্র। সেখানে ধূপের সুবাস খেলা করছে। এমন কত স্মৃতি যে মনের মাঝে ভিড় করছে, কোনটা রেখে কোনটা বলি? আজও সেই স্মৃতি মাথায় রেখে আমিও পুরানোকে নতুন করার প্রয়াসে মাতি... ঈদ উপলক্ষে রান্না ঘরের ফ্যানটাও পরিষ্কার করছি। তারপর সিলিং ফ্যানের বাতাস দিয়ে শুকিয়ে নিয়েছি। আর নতুন কাপড়? হ্যাঁ পড়েছি। চাঁদ দেখার জন্যও মা নতুন জামা পরাতেন। আমাদের ভাই বোনকে বলতেন- নতুন চাঁদকে নতুন করে সেজেগুজে বরণ করতে হয়। সত্যিই তো, চাঁদ তো এসেছে খুশির বার্তা নিয়ে, ওকেও খুশি করা চাই। আর তাই ঈদ মানেই নতুন পোশাক এই সস্তা ধ্যান-ধারণা আমার অনেক আগেই উবে গেছে। যখন ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ পড়েছি। পরবর্তীতে ছবি দেখেছি।
আসুন পুরানোকে নতুন প্রাণ দেই। সেই প্রাণের উদযাপন করি। ঈদের আভিধানিক অর্থের প্রতি যত্নশীল হই। আরবিতে ঈদ মুবারক বলে মুখে ফেনা তুলে আসলেই কি কল্যাণের পথে ধাবিত হওয়া যায়? সবাই মানসিক শান্তিতে থাকুন। মনোগজতের পরিচর্যা করুন। প্রকৃতির অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করুন। সর্বোপরি মানুষকে ভালোবাসুন...
প্যানেল