
ছবি: প্রতীকী
গত রোববার (১ জুন) রাশিয়ার ইরকুতস্কের বেলায়া, উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে ওলেনিয়া, মধ্য রিয়াজানের ডিয়াজিলেভো ও মধ্য ইভানভো অঞ্চলের ইভানভো বিমানঘাঁটিতে একযোগে বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালানো হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ইউক্রেন, যার কোডনেম ছিল ‘স্পাইডারওয়েভ’।
এই ড্রোন হামলায় রাশিয়ার অন্তত ৪০টির বেশি সামরিক বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংস হওয়া বিমানের তালিকায় আছে টুপলেভ টিইউ-২২এম৩, টিইউ-৯৫ এবং এ-৫০ নজরদারি বিমান।
রুশ ক্ষয়ক্ষতি ও ইউক্রেনের দাবি
রয়টার্সে প্রকাশিত ইউক্রেনের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় রাশিয়ার প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ক্ষতি হয়েছে। যদিও রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ বিবরণ দেয়নি, তবে তারা হামলার ঘটনা ও কিছু বিমানের ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে।
এই ঘটনার সময়ই শান্তি আলোচনা নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন এক টেবিলে বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এমন এক প্রেক্ষাপটে এই হামলা শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে।
রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের গোয়েন্দা কৌশল
বিগত দেড় বছর ধরে ইউক্রেনের এসবিইউ (গোয়েন্দা সংস্থা) রাশিয়ার ভেতরে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু রাশিয়ার মত কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত দেশে তথ্য সংগ্রহ করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
এখানেই ঘটে এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালে রুশ বিমান হামলার পর অনুশোচনায় ভোগা রাশিয়ার এক পাইলট ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন। তার দেয়া তথ্যের মধ্যে ছিল ইউনিটের গতিবিধি ও কর্মকর্তাদের ছবি।
কীভাবে হামলা হলো
বিভিন্ন উৎসের তথ্য একত্র করে এসবিইউ হামলার চূড়ান্ত পরিকল্পনা তৈরি করে। রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, হামলার জন্য বিস্ফোরক বোঝায় ড্রোনগুলো কাঠের শেডের ছাদে লুকিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে পাঠিয়েছিল ইউক্রেন। যা পরে ট্রাকের পেছন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
হামলার জন্য ব্যবহৃত হয় ১১৭টি ড্রোন। এগুলো প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিমানঘাঁটিগুলোর ওপর হামলা চালায়। লক্ষ্যবস্তুর ওপর একের পর এক ড্রোন আঘাত হানতে থাকে।
ভিতরের সহায়তা ও প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা
সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট অনুযায়ী, এই অভিযানে ইউক্রেনের রুশ ভূখণ্ডে থাকা গোয়েন্দা বা সহযোগীদের সাহায্য ছিল। যদিও তা যাচাই করা যায়নি, তবে এটি ইউক্রেনের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের গভীরতা নির্দেশ করে।
ড্রোনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে রাশিয়ার ভেতরে সঞ্চিত ছিল বলেও জানা গেছে।
রুশ বোমারু বিমান ধ্বংস, পরিণতি গুরুতর
ধ্বংস হওয়া বিমানের মধ্যে ছিল দীর্ঘপাল্লার কৌশলগত বোমারু বিমান—বিশেষ করে সোভিয়েত আমলে তৈরি টিইউ-২২এম৩ ও টিইউ-৯৫। এই সুপারসোনিক বিমানগুলো ক্রুজ মিসাইলসহ বিভিন্ন অস্ত্র বহন করতে পারে এবং পারমাণবিক অস্ত্র হামলার উপযোগী।
রাশিয়া এসব বিমান ব্যবহার করে ইউক্রেনের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাত। বিশেষ করে টিইউ-৯৫ ছিল রাশিয়ার কৌশলগত বিমান বাহিনীর প্রধান অংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সফল হামলা রাশিয়ার মনোবলে বড় আঘাত হেনেছে। একইসঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এখন আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=e80uvnOXwxk
রাকিব