এই দুই শ্রেণির লোককে শরিক করলে কোরবানি হবে না! সতর্ক করলেন ইসলামি বিশেষজ্ঞরা!

ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোরবানি। কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে অনেক সময় না জেনে বা অবহেলায় এমন কিছু কাজ করে ফেলেন অনেকে, যার ফলে পুরো কোরবানি বাতিল হয়ে যেতে পারে—শুধু নিজের নয়, একাধিক শরিকের কোরবানি পর্যন্ত অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি আপনার রবের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার: ২)। আরও একটি আয়াতে তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সুরা হজ: ৩৪)

তাকওয়া ছাড়া কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়

শুধু পশু জবাই করলেই কোরবানি হয়ে যায় না—আল্লাহর কাছে গরুর মাংস কিংবা রক্ত কিছুই পৌঁছায় না। তিনি যাচাই করেন বান্দার অন্তরের তাকওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর নিকট এগুলোর গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সুরা হজ: ৩৭)

কেউ যদি লোক দেখানো বা বড়লোকি জাহির করার জন্য কোরবানি করে কিংবা কেবল মাংস খাওয়ার উদ্দেশ্যে করে, তবে তার কোরবানি সহিহ হয় না।

এই দুই শ্রেণির লোককে শরিক করলে বিপদ

কোরবানিতে উট, গরু, মহিষ সাত জন পর্যন্ত শরিক হতে পারেন। শরিকদের মধ্যে যেকোনো একজনের নিয়তে ভুল থাকলে সকলের কোরবানি বাতিল হয়ে যাবে।

ফিকাহবিদগণ বলেন, যদি কেউ আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে না করে শুধুমাত্র গোশত খাওয়ার ইচ্ছায় কোরবানি দেয়, তবে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তাকে শরিক করলে অন্য কারও কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮; কাজিখান: ৩/৩৪৯)

তাই শরিকদের মধ্যে কেউ যদি—

1. লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন

2. শুধু মাংস খাওয়ার নিয়তে কোরবানি দেন

তবে তাদের সঙ্গে কোরবানিতে শরিক হলে পুরো কোরবানিই বাতিল হয়ে যেতে পারে। ফলে সতর্কতার সঙ্গে ভালোভাবে জেনে-বুঝে শরিক নির্বাচন করা উচিত।

হারাম উপার্জন থেকে কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়

আরও একটি গুরুতর বিষয় হলো হারাম অর্থে কেনা পশু কোরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘আল্লাহ পবিত্র; তিনি শুধু পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন।’ (তিরমিজি: ২৯৮৯)

তিনি আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ব্যয় কর তোমাদের অর্জিত হালাল সম্পদ থেকে।’ (সুরা বাকারা: ২৬৭)

তাই কারো ইনকামে হারাম উপার্জনের অংশ থাকলে, সেই টাকায় কোরবানি দিলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

কোরবানি শুধু একটি সামাজিক আয়োজন নয়, এটি আত্মশুদ্ধির, তাকওয়ার ও আত্মত্যাগের এক পরীক্ষার ক্ষেত্র। তাই শরিক নির্বাচনে সতর্কতা, হালাল উপার্জন এবং খাঁটি নিয়ত ছাড়া কোরবানি অর্থহীন হয়ে যেতে পারে।