ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রাই

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৬ জুন ২০২৫

বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয়রাই

ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে নয়াদিল্লির একতরফা বিধিনিষেধের ফল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ একাধিক পণ্যে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থলবন্দর। এতে সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী ব্যবসা ও খেটে খাওয়া মানুষের ওপর।

মঙ্গলবার (৩ জুন) ভারতের প্রভাবশালী অনলাইন গণমাধ্যম দ্য ওয়্যার এক ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনে তুলে ধরে—বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য রেষারেষির মূল মূল্য দিচ্ছে ভারতের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে সীমান্ত ঘেঁষা রাজ্যগুলোর ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী পরিবারগুলো।

কয়েকদিন আগেই তৈরি পোশাকসহ বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি পণ্য স্থলপথে আমদানি নিষিদ্ধ করে নয়াদিল্লি। নির্দিষ্ট করে বলা হয়, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের স্থল সীমান্ত দিয়ে এসব পণ্য রপ্তানি করতে পারবে না ঢাকা। যেখান থেকেই শুরু হয় মূল সংকট।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল, হিলি, মহদীপুর, চ্যাংরাবান্ধা এবং ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারতে বেশকিছু পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। যার ফলে এক প্রকার জনমানবশূন্য বিরান প্রান্তরে পরিণত হয়েছে বন্দরগুলো। এমনটাই বলা হয়েছে দ্য ওয়্যার-এর প্রতিবেদনে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে স্থলবন্দরগুলো সকল পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় অচল হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ যারা দু'দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর জীবিকা নির্বাহ করতো, এমন হাজার হাজার পরিবার এখন বিপর্যস্ত। একদিকে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশে বাধা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে এই পণ্যের ওপর নির্ভর করে যেসব ভারতীয় মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতেন, তারা চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।

পেট্রাপোল হয়ে পড়েছে জনশূন্য

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর হিসেবে পরিচিত পেট্রাপোল বন্দরে বাংলাদেশ-ভারতের প্রায় ৭০ শতাংশ স্থলবাণিজ্য সম্পন্ন হয়। কিন্তু দ্য ওয়্যারের তথ্য অনুযায়ী, যেখানে প্রতিদিন ৬০০-৭০০ ট্রাক চলাচল করতো, এখন তা নেমে এসেছে সাপ্তাহিক গড়ে ২০০-এর নিচে।

এ পরিস্থিতিতে বহু দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ট্রাকচালক, দিনমজুর ও খালাসকারীরা কাজ হারাচ্ছেন। দ্য ওয়্যারের হিসাব মতে, সীমান্তের এই সংকটে প্রায় ১২-১৫ হাজার মানুষ সরাসরি উপার্জনের পথ হারাতে বসেছেন।

ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে মূল্যবৃদ্ধি

স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্যসমূহ এখন বিকল্প পথে, অতিরিক্ত ৮-১০ দিন সময় নিয়ে ভারতে পাঠানো হচ্ছে। এতে করে ভারতের বাজারে এসব পোশাকের দাম বাড়ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। দ্য ওয়্যার, হিন্দুস্তান টাইমসসহ একাধিক গণমাধ্যমে উঠে আসে এ তথ্য। গণমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, গেল ১০ মাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ স্থলসীমান্তগুলো দিয়ে। যেখানে বেশিরভাগই তৈরি পোশাক।

এই পরিস্থিতির সরাসরি প্রভাব পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপূজা বাজারে। রাজ্যটির নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে বাংলাদেশি সাশ্রয়ী পোশাকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে যোগান কমে গেলে পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে এবং সীমিত আয়ের মানুষ পড়বে বিপাকে।

রাজনৈতিক চাপে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করতে গিয়ে দিল্লি হয়তো কৌশল নিতে চাচ্ছে, কিন্তু এতে করে নিজেদের সীমান্ত রাজ্যগুলোর অর্থনীতিতে ধস নামানো ছাড়া আর তেমন কিছু অর্জন করতে পারছে না।

বিশেষ করে যেসব পণ্য বাংলাদেশ তুলনামূলক কম দামে রপ্তানি করতো, সেগুলোর সরবরাহে বাধা আসায় ভারতীয় খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে চাপ বেড়েছে।

 

সানজানা

আরো পড়ুন  

×