ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিস অ্যাটমিক বোম্ব: সাত দশকের রহস্য উন্মোচনে এক বিজ্ঞানীর লড়াই

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২ জুন ২০২৫

মিস অ্যাটমিক বোম্ব: সাত দশকের রহস্য উন্মোচনে এক বিজ্ঞানীর লড়াই

ছবি: সংগৃহীত

১৯৫৭ সালের এক ঐতিহাসিক ছবিতে স্যাণ্ডস হোটেলের এক নৃত্যশিল্পীকে দেখা যায় মাশরুম আকৃতির স্যুইমসুট পরে দাঁড়িয়ে আছেন নেভাদার মরুভূমিতে। ছবিটি হয়ে ওঠে মার্কিনঅ্যাটমিক এজযুগের প্রতীক। তাকে বলা হয়মিস অ্যাটমিক বোম্ব কিন্তু কে ছিলেন এই নারী? তার আসল নাম কী? সেটা কেউ জানতো না।

১৯৫১ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের বাইরে মরুভূমিতে শত শত পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়। এই সময়েই লাস ভেগাস শহর নিজেকে গড়ে তোলে ফ্যান্টাসি বিনোদনের প্রতীক হিসেবে। শহরের পর্যটন প্রচারণায়অ্যাটমিক বোম্ব”-এর জনপ্রিয়তা ব্যবহার করা হয়।

১৯৫৭ সালে স্যাণ্ডস হোটেলের প্রধান নৃত্যশিল্পীকে নিয়ে একটি ছবি তোলা হয়। এই শো-গার্লের নাম পরিচিত ছিললি . মারলিননামে, কিন্তু সেটিও ছিল ছদ্মনাম।

এই রহস্যভেদে ৮১ বছর বয়সী ইতিহাসবিদ প্রাক্তন বিজ্ঞানী রবার্ট ফ্রিডরিখস লেগে ছিলেন দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে।

প্রায় ২৫ বছর আগে ফ্রিডরিখস প্রথমবারের মতোমিস অ্যাটমিক বোম্ব”-এর পরিচয় জানতে আগ্রহী হন। তখন লাস ভেগাসেঅ্যাটমিক মিউজিয়ামখোলার প্রস্তুতি চলছিল। তিনি আশা করেছিলেন ছবির সেই নারী হয়তো এখনো জীবিত, তাকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে উদ্বোধনে। কিন্তু সত্য জানতে তাকে পেরোতে হয় বহু বাধা।

তিনি শত শত খবরের কাগজ ঘাঁটেন, লাইব্রেরির সংগ্রহ ঘেঁটে খোঁজ নেন পুরনো ফটোগ্রাফারদের, সাবেক শো-গার্লদের সাক্ষাৎকার নেন। কিন্তু দীর্ঘদিন কোনো সত্যতা মেলেনি।

২০২৪ সালের শীতকালে অ্যাটমিক মিউজিয়ামে দেওয়া এক বক্তৃতার পর এক দর্শক ফ্রিডরিখসকে একটি বার্তা পাঠান। সেখানে একটি লাইন চোখে পড়ে—"স্যান্ডস হোটেলের প্রধান নৃত্যশিল্পী ছিলেন তিনি।" ফ্রিডরিখসের তৎপরতায় বেরিয়ে আসে তার আসল নাম: আনা লি মাহোনি।

আনা লি মাহোনি

১৯২৭ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে জন্মগ্রহণ করেন আনা লি। ছোটবেলায় ব্যালে নাচ শেখেন, পরে নিউ ইয়র্কে বিভিন্ন মঞ্চনাটক সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেন।

১৯৫৭ সালে তিনি ছিলেন স্যান্ডস হোটেলের কোপা শোর প্রধান নৃত্যশিল্পী। এই সময় ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা লুইস আর্মস্ট্রংয়ের মতো কিংবদন্তিদের সামনে পারফর্ম করেছেন।

পরবর্তী জীবনে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলর হিসেবে ৩০ বছর কাজ করেন, পরে হাওয়াই চলে যান এবং বিবাহিত জীবন কাটান। ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০০১ সালে সান্তা ক্রুজ, ক্যালিফোর্নিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।

এই ছবি লাস ভেগাসের . মিলিয়ন ছবির মধ্যে অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন। এই ছবিটি শুধু ঐতিহাসিক নয়, বরং শিল্প রাজনীতির যুগল প্রতীক হয়ে উঠেছে।

প্রবীণ ফ্রিডরিখস বলেন, “আমার উদ্দেশ্য কেবল কৌতূহল নয়, এটা ইতিহাসের একটি অপুর্ণতা ছিল। সেই অপুর্ণতা পূরণ করতে চেয়েছিলাম।দীর্ঘ গবেষণায় অবশেষে প্রমাণ পেয়েছেন লি . মারলিন, আনা লি মাহোনি এবংমিস অ্যাটমিক বোম্বএকই নারী।

এই রহস্যের অনুসন্ধান নিয়েই একটি প্রদর্শনী ‘The Search for Miss Atomic Bomb’ ১৩ জুন থেকে অ্যাটমিক মিউজিয়ামে শুরু হতে যাচ্ছে।

মুমু

×