
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং (Lee Jae-myung)—একজন রাজনীতিক যার জীবনকাহিনি অনেকটাই উপন্যাসের মতো। এক সময়ের কারখানায় কাজ করা দরিদ্র শিশু আজ কোরিয়ার সর্বোচ্চ পদে। তাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই যেনো লড়াই, হতাশা আর দৃঢ় সংকল্পের অনন্য দৃষ্টান্ত।
শ্রমজীবী শিশুর জীবন থেকে নেতৃত্বের যাত্রা
লি জে-মিয়ং জন্মেছিলেন এক দরিদ্র পরিবারে। পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করেই তাকে সিউলের নিকটবর্তী সেওংনাম শহরের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়।
একটি বেসবল গ্লাভস তৈরির কারখানায় কাজ করার সময় তার বাঁহাতের কনুই একটি প্রেশার মেশিনে চাপা পড়ে, ফলে তিনি স্থায়ীভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে যান। সেই সময় হতাশ হয়ে দুবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
কিন্তু এখানেই থেমে যাননি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি চুং-আং বিশ্ববিদ্যালয়ে (Chung-Ang University) ফুল স্কলারশিপে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে একজন মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
জীবনী থেকে অনুপ্রেরণা
২০১৭ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনীতে লি লিখেছেন:
"Hopes and ordeals always come together.The roles of ordeals are not getting people to surrender,but testing how serious and desperate their hopes are" (আশা আর প্রতিকূলতা সবসময় একসাথে আসে। প্রতিকূলতার কাজ মানুষকে হার মানানো নয়, বরং পরীক্ষায় ফেলা—তোমার আশা কতটা গভীর এবং তুমি তা পেতে কতটা মরিয়া।)
রাজনীতিতে অভিষেক ও উত্থান
২০০৫ সালে লি রাজনীতিতে যোগ দেন। প্রথমদিকে কয়েকটি নির্বাচনে হেরে গেলেও, ২০১০ সালে সেওংনামের মেয়র হিসেবে জয়ী হন এবং ২০১৪ সালে পুনঃনির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল গিয়ংগি প্রদেশের (Gyeonggi Province) গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাটকীয় মোড়
২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে ইউন সুক-ইওল-এর কাছে পরাজিত হন লি জে-মিয়ং। তবে, ২০২৫ সালের বিশেষ নির্বাচনে লি ফিরে আসেন—আর এবার একটি ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
আইনি জটিলতা ও প্রেসিডেন্সিয়াল ইমিউনিটি
তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে—
1.একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ
2.ভোটের সময় মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ
লি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, এসব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো রাষ্ট্রপতির দায়মুক্তির কারণে স্থগিত থাকবে এবং ২০৩০ সালে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে আবার চালু হতে পারে।
লি জে-মিয়ং-এর এই অভাবনীয় যাত্রা কেবল দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য নয়, পুরো বিশ্ববাসীর জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা। তাঁর গল্প প্রমাণ করে—লড়াই, আত্মত্যাগ ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে জীবনের সবচেয়ে বড় বাধাও জয় করা সম্ভব।
Mily