
এক বছরেরও বেশি সময় আগে ডাচ আদালত ইসরায়েলের কাছে সরাসরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও, নেদারল্যান্ডস এখনো সেই যুদ্ধবিমান কর্মসূচির সরবরাহ চেইনের অংশ হিসেবে রয়ে গেছে—এমনটাই দাবি করেছে এক নতুন প্রতিবেদন।
ফিলিস্তিনি ইয়ুথ মুভমেন্ট (PYM) নামের একটি সংগঠনের গবেষণা অনুযায়ী, রটারডাম বন্দরে এখনো নিয়মিতভাবে এমন জাহাজ আসে যেগুলো এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ বহন করে। এই জাহাজগুলোর মালিক ডেনমার্কের শিপিং জায়ান্ট মার্স্ক (Maersk)। গবেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারির পরেও এই চালানগুলো অব্যাহত রয়েছে, যা আদালতের রায়ের পরও নিষিদ্ধ কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাচ একটি আপিল আদালত রায় দিয়েছিল যে, ইসরায়েলে এফ-৩৫ যন্ত্রাংশ পাঠানো বন্ধ করতে হবে, কারণ এই যন্ত্রাংশগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হওয়ার ‘স্পষ্ট ঝুঁকি’ রয়েছে। এরপর ডাচ সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত নিচের আদালতের আদেশ কার্যকর থাকার কথা।
ডাচ এনজিও ‘দ্য রাইটস ফোরাম’-এর পরিচালক জেরার্ড জনকমান বলেন, “রটারডাম বন্দর ইসরায়েলের এফ-৩৫ কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে এই বন্দরও একভাবে সহায়তাকারী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”
ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আদালতের আদেশ শুধুমাত্র নেদারল্যান্ডস থেকে ইসরায়েলে সরাসরি যন্ত্রাংশ পাঠানোর উপর প্রযোজ্য ছিল এবং তারা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে।
অক্সফাম নোভিব, প্যাক্স ফর পিস এবং দ্য রাইটস ফোরাম নামে তিনটি সংগঠন একসঙ্গে ডাচ সরকারকে আদালতে নিয়েছিল এই ইস্যুতে। তারা বলছে, নেদারল্যান্ডস থেকে সরাসরি রপ্তানি না হলেও দেশটি এখনো ইসরায়েলের এফ-৩৫ প্রকল্পের সরবরাহ চেইনের একটি অংশ।
মার্স্ক নিজেও নিশ্চিত করেছে যে তাদের মার্কিন শাখা Maersk Line Limited এফ-৩৫ সরবরাহ চেইনে কাজ করে থাকে। তারা জানায়, তারা সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র বা গোলাবারুদ সরবরাহ করে না, তবে এফ-৩৫ প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের মধ্যে যন্ত্রাংশ পরিবহন করে থাকে।
PYM দাবি করেছে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে ইসরায়েলের প্রতিটি এফ-৩৫ বিমানের পাখা মার্স্ক পরিবহন করেছে এবং এটি ফিলিস্তিনিদের উপর চালানো সহিংসতার সরাসরি সহায়তা।
প্যাক্স ফর পিস-এর প্রোজেক্ট লিডার ফ্রাঙ্ক স্লাইপার বলেন, “মার্স্ক ইসরায়েলের মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে নিজেকে আলাদা না করে বরং অস্ত্র সরবরাহে ভূমিকা রাখছে। এতে করে তারা অপরাধে অংশীদার হয়ে উঠছে।”
ইসরায়েল বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা নিজেদের জন্য একটি কাস্টমাইজড এফ-৩৫ সংস্করণ ব্যবহার করে। এই যুদ্ধবিমানটি বহু সমালোচনার মুখে পড়েছে গাজায় হামলার সময় এর ব্যবহার নিয়ে।
সানজানা