ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির ঈদে ঢাকার অলিগলিতে বিক্রি হচ্ছে চান্দের চরের মেহেদি!

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৪৮, ৫ জুন ২০২৫

কোরবানির ঈদে ঢাকার অলিগলিতে বিক্রি হচ্ছে চান্দের চরের মেহেদি!

কোরবানি ঈদে যেমন গরু, ছাগল ইত্যাদির কেনাকাটায় উৎসবের আমেজ থাকে, তেমনি মেহেদির চাহিদাও থাকে ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে মেহেদি লাগানোর এক ধরনের আনন্দ ও রীতি আছে—যা ঈদের সাজের অপরিহার্য অংশ।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দের চর ও খাসকান্দির চর এলাকায় ঈদকে সামনে রেখে মেহেদি চাষ ও বাণিজ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে এখানে মেহেদির পাতা ও ডোগার চাহিদা বেড়ে যায়, যা ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় সরবরাহ হয়।

বালুচরের চাষিরা জানান, মেহেদি চাষ থেকে তারা বছরে লক্ষাধিক টাকা আয় করেন। প্রতি বিঘা জমিতে রোপণকৃত মেহেদি থেকে ছয়বার পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় মেহেদির চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। মেহেদির বাজার বর্তমানে ঢাকা শহরের বাসাবো, খিলগাঁও, শান্তিনগর, মুগদা, নয়াবাজার, চক বাজার, কসাই টুলি ও সিদ্দিক বাজারে সুনির্দিষ্ট দোকানে বিক্রি হচ্ছে।চান্দের চর এলাকার মেহেদি চাষি মো. দীন ইসলাম বলেন, মেহেদি চাষে লোকসানের ভয় নেই কারণ একবার রোপণ করলে গাছ যুগের পর যুগ পাতা দিতে থাকে, শুধু সময়মত পরিচর্যা প্রয়োজন। আর মেহেদি বেপারী আব্দুল বারেক জানান, পুরান ঢাকার অলিগলিতে মেহেদি ফেরি করা এখন কম হলেও পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়ছে।

আগে মেহেদি চাষে জড়িত প্রায় একশ পরিবার থাকলেও বর্তমানে সেটা শূন্যের কোটায়।তবুও বালুচর ইউনিয়নে এই মেহেদি চাষে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ২০টি পরিবার। তাদের অধিকাংশই ছোটখাটো জমিতে বাড়ির আশপাশে মেহেদি চাষ করে থাকেন। প্রতি বিঘায় ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হলেও এর চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগ থেকে তারা পুরোপুরি উপকৃত হতে পারছেন না। চাষিরা জমি কমে যাওয়ার পেছনে জমি অবাধে ভরাট করে আবাসন ব্যবসার প্রভাবকেই দায়ী করছেন।

মহিলা মেম্বার সালেহা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে মেহেদি চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ ও সরকারী সহযোগিতা না পাওয়ায় চাষ সম্প্রসারণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ শুভ্র জানান, সরকারি অনুদান না থাকলেও তারা নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন এবং চাষ সম্প্রসারণে উৎসাহিত করছেন।
তিনি আরও বলেন, মেহেদি একটি লাভজনক ফসল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। চলতি বছরেও শুধু মাত্র বালুচরে বাণিজ্যিকভাবে মেহেদি চাষ হয়েছে এবং এতে কৃষকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।

ঈদকে সামনে রেখে সিরাজদিখানের বালুচরে নারী-পুরুষ মেহেদি গাছের শাখা কেটে প্রস্তুত করছেন ঢাকাসহ দেশের বড় বাজারে পাঠানোর জন্য। মেহেদি শুধু হাতের মেহেদি হিসেবে নয়, চুলের যত্ন ও ঔষধি গুণেও ব্যাপক জনপ্রিয়। মেহেদি চাষের ফলে চাষিরা যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন, তেমনি এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

রাজু

×