ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইলন মাস্ক ইতিহাসে যেভাবে অমর হয়ে থাকবেন: নিউইয়র্ক টাইমস

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ৪ জুন ২০২৫

ইলন মাস্ক ইতিহাসে যেভাবে অমর হয়ে থাকবেন: নিউইয়র্ক টাইমস

ছবি: সংগৃহীত

এই লেখাটি নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত একটি মতামত। লিখেছেন লুইজ পেরি, যিনি ব্রিটেনে বসবাসকারী একজন সাংবাদিক। তিনি ‘The Case Against the Sexual Revolution’ বইটির লেখিকা এবং ‘Maiden Mother Matriarch’ নামের পডকাস্টের উপস্থাপিকা।

নিচে তাঁর মতামতধর্মী এই প্রতিবেদনটির সংক্ষিপ্ত অনূদিত রূপ তুলে ধরা হলো-

বিশ্ব ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা তাদের স্বপ্ন আর দৃঢ়তার মাধ্যমে বাস্তবতাকে নিজেদের মতো করে গড়ে নিতে পারেন। তারা হয়তো বিতর্কিত কিংবা অদ্ভুত স্বভাবের—কিন্তু অগ্রাহ্য করার মতো নয়। এমন একজনই হলেন ইলন মাস্ক। বিশ্বের সবচেয়ে বিতর্কিত ও আলোচিত প্রযুক্তিবিদ, ধনকুবের এবং উদ্যোক্তা মাস্ককে অনেকেই একবিংশ শতাব্দীর ‘সিসিল রোডস’ হিসেবেই বিবেচনা করছেন।

ইলন মাস্ক নিছক কোনো শিল্পপতি নন, তিনি ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে যুক্ত ছিলেন, এখন মহাকাশ জয় করতে চাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতের মানব সভ্যতা রক্ষার দূরদর্শী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। অনেকেই তাকে অস্থির, একগুঁয়ে এবং বিতর্কিত বললেও—কেউ তাকে বোকা কিংবা প্রতারক ভাবলে হয়তো ভুল করবে। তার স্বপ্নগুলো নিছক কল্পনাপ্রসূত নয়, বরং বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ানো বিশাল কর্মপরিকল্পনা।

‘সূর্য একদিন পৃথিবীকে পুড়িয়ে ফেলবে’, ইলন মাস্কের সতর্কতা

ফক্স নিউজকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ ধ্বংস হয়ে যাবে সূর্যের কারণেই। সূর্য ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে, তাই একসময় আমাদের বহুগ্রহে বিস্তার ঘটাতেই হবে।’ সেই লক্ষ্যে তিনি প্রায় ২৩ বছর আগে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, মঙ্গলে যাবেন। আজও সেই স্বপ্নে অবিচল তিনি। ‘আমি মঙ্গলে মরতে চাই—শুধু যেন অবতরণের সময় না হয়’, বলেন মাস্ক।

এমন বক্তব্যে অনেকেই তাকে কল্পনাবিলাসী ভাবলেও, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। কারণ ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স পৃথিবীর বাকি সব দেশের সম্মিলিত প্রচেষ্টার তুলনায় সাত গুণ বেশি ওজনের উপগ্রহ ও মহাকাশযান মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছে!

রাজনীতির মাঠ ছেড়ে মহাকাশে মাস্কের দৌরাত্ম্য

সম্প্রতি মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক বিশেষ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার প্রশাসনিক উদ্যোগ অনেক ক্ষেত্রে বিতর্কের জন্ম দিলেও, স্পেসএক্সে তার অগ্রগতি প্রশ্নাতীত। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রকল্পের (ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’-এর অনুকরণে) বিশাল ব্যয়বরাদ্দের বড় অংশই যাচ্ছে স্পেসএক্স-এর কক্ষপথে হাজারো স্যাটেলাইট স্থাপনের খাতে।

সিসিল রোডসের ছায়া, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

মাস্কের চরিত্র, জীবনপথ এবং দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই মিলে যায় সিসিল রোডসের সঙ্গে—যিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রতাপশালী চরিত্র ছিলেন। ডায়মন্ড ব্যবসা থেকে রাজনীতি, তারপর আফ্রিকায় ব্রিটিশ আধিপত্য বিস্তার—রোডস ছিলেন এক অপ্রতিরোধ্য ‘ভিশনারি’। তবে তিনি যেমন প্রশংসিত, তেমনি বিতর্কিত ছিলেন আফ্রিকায় সহস্র মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী হয়ে।

রোডসের মতোই মাস্কও কম বয়সে নিজ দেশ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন, খ্রিস্টধর্মের প্রথাগত মূল্যবোধ অস্বীকার করেছিলেন। এমনকি মাস্কও কোনো আনুষ্ঠানিকতা বা পোশাকের বিধিনিষেধ মানেন না।

ভবিষ্যতের ইতিহাস মাস্ককে কীভাবে দেখবে?

আজকের দিনে মাস্কের নামে যত বিতর্ক, অপবাদ কিংবা ব্যঙ্গই থাকুক—ইতিহাস হয়তো তাকে এক ভিন্ন চোখে দেখবে। যেমন রোডসকে আজ অনেকে ঘৃণা করেন, কিন্তু ইতিহাস তাকে বাদ দিতে পারেনি। ‘রোডস মাস্ট ফল’ আন্দোলন সেই প্রমাণ দেয়।

একইভাবে মাস্কের অভিযান, তাঁর ‘মানবতার ভবিষ্যৎ রক্ষা’ পরিকল্পনা—ব্যর্থ হলেও, ইতিহাসে তা উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে। অনেকেই আজ তাকে পছন্দ করেন না, কিন্তু সবাই বুঝে গেছেন, তিনি নিছক একজন ‘সাধারণ’ মানুষ নন। বরং, তাঁর মধ্যে রয়েছে ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা।

 

সূত্র: নিউইয়র্ক টাইমস।

রাকিব

×