ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কিছুই ভাল্লাগেনা, সমাধান কী?

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৩ জুন ২০২৫

কিছুই ভাল্লাগেনা, সমাধান কী?

ছবি: সংগৃহীত

"ভাই আমার ভালো লাগছে না। আপা আমার ভালো লাগছে না। বন্ধু আমার ভালো লাগছে না। ভাবী, কিছুই ভালো লাগছে না।" — এই একটি ছোট্ট বাক্য আজকাল কত মানুষের মুখে, কত মানুষের মনের গভীর থেকে উঠে আসে। আমরা শুনি, কিন্তু বুঝি কি? ভাবি কি, এর পেছনে কি আছে?

আজকাল আমরা একটু একটু করে বুঝতে শিখেছি — কেউ যখন বলে, “কিছুই ভালো লাগছে না,” তখন সে কথার পেছনে থাকতে পারে গভীর এক মানসিক হাহাকার। আগে আমরা বলতাম — “আরে ঘুরে আসো, ভালো লাগবে।” “ওসব কিছু না, সময়ের ব্যাপার।” কিন্তু এসব কথায় যদি কারও গভীর হতাশা দূর হতো, তাহলে এত মানুষ বিষণ্নতায় ভুগতো না।

কারো যদি কয়েক ঘণ্টা বা এক-দুই দিনের জন্য খারাপ লাগে, সেটা হয়তো স্বাভাবিক। জীবনের ছোটখাটো দুশ্চিন্তা বা ক্লান্তি থেকেই এমনটা হতে পারে। কিন্তু যদি কারো দিনের পর দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ এমনটা চলতে থাকে — কিছুই ভালো না লাগা, আনন্দহীনতা, শূন্যতা, ক্লান্তি — তাহলে সেটি হতে পারে বিষণ্নতার লক্ষণ।

বিষণ্নতার লক্ষণগুলো কেমন?

  • মন খারাপ লেগেই থাকে, সবকিছু নির্জীব লাগে।
  • যেসব কাজ একসময় আনন্দ দিত, সেগুলোতেও এখন আর আনন্দ আসে না।
  • হাসি আসে না, বরং চারপাশের মানুষের হাসিও বিরক্তিকর লাগে।
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ছোটখাটো ঘটনায় রাগ উঠে যায়।
  • নিজের সন্তানকেও সহ্য হয় না, কষ্ট দেয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
  • শরীর দুর্বল লাগে, শক্তি পাওয়া যায় না।
  • চিন্তা-চেতনা স্লথ হয়ে যায়, মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়।
  • আবেগ অনুভূতি কমে যায়, হাসি-কান্না কোনোটাই আসে না।
  • খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়, বা অতিরিক্ত খাওয়া শুরু হয়।
  • ঘুম আসে না, অথবা খুব বেশি ঘুম হয়।
  • ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে যায়, সকালের শুরুটা আরও বিষণ্ণতায় কাটে।
  • আত্মহত্যা বা জীবন অর্থহীন মনে হওয়া পর্যন্ত ভাবনায় আসে।
  • অতীতের সুখের দিনগুলো মনে হয় অধরা, ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
  • কেন এমন হয়?

মানসিক বিষণ্নতা হঠাৎ করে আসে না। এটি আসে চাপ, একঘেয়েমি, ব্যর্থতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা জীবনের কোনো গভীর চ্যালেঞ্জের প্রতিক্রিয়ায়। এটি শুধু মন খারাপ নয় — এটি একটি মানসিক রোগ, যা মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার ভারসাম্যহীনতার ফলে হয়ে থাকে। এর চিকিৎসা রয়েছে, যেমনটা জ্বর বা ডায়াবেটিসের থাকে।

কী করা যায়?
১. নিজের আবেগ বোঝার চেষ্টা করুন
আপনি কেন ভালো বোধ করছেন না, কোন অভাব অনুভব করছেন — সেটা বোঝা জরুরি।

২. রুটিনে পরিবর্তন আনুন
প্রতিদিন একই রকম জীবন একঘেয়েমি আনে। নতুন কাজ, নতুন জায়গা, নতুন অভিজ্ঞতা জীবনে প্রাণ ফেরাতে পারে।

৩. শারীরিক পরিশ্রমে মন ভালো হয়
হাটাহাটি, ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা যেকোনো ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি এন্ডোরফিন নিঃসরণ ঘটায়, যা মন ভালো করতে সাহায্য করে।

৪. প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন
গাছপালা, প্রাণী, সবুজ প্রকৃতি মনকে প্রশান্তি দেয়।

৫. মেডিটেশন, নামাজ, ধ্যান বা সচেতনতার চর্চা করুন
একাকিত্ব ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে এগুলো কার্যকর।

৬. বন্ধু ও পরিবারের সাথে কথা বলুন
নিজের খারাপ লাগা, চাপ, দুর্বলতা শেয়ার করলে হালকা লাগে। অনেক সময় সমাধানের সূত্র অন্যের কথায় পাওয়া যায়।

৭. সৃজনশীল কিছু করুন
ছবি আঁকা, গান শোনা, সিনেমা দেখা বা নিজেকে ভালো লাগায় জড়িয়ে রাখুন।

৮. বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন
দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা হলে দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান। মনে রাখবেন, হেল্প চাওয়া দুর্বলতা নয় — এটি সচেতনতা ও সাহসের পরিচয়।


জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ থাকবে। মন খারাপ হবে। মাঝে মাঝে সবকিছু অর্থহীন লাগবে। কিন্তু এসবই জীবনের অংশ। চূড়ান্ত সত্য নয়। আপনি চাইলে পরিবর্তন আনতে পারেন। একটু সচেতনতা, সাহসিকতা আর সঠিক সহায়তা — এটাই পারে বিষণ্নতা থেকে মুক্তি দিতে।

ভালো না লাগা যদি স্থায়ী হয়ে যায়, তাহলে আর দেরি নয়। নিজের জন্য, প্রিয়জনদের জন্য — এখনই সময় সেরে ওঠার। মনে রাখুন, আপনি একা নন।
 

ফরিদ

×