
ছবি: সংগৃহীত
রাতে একটি বিশেষ সূরা তেলাওয়াত করলে সংসারের দারিদ্র্য ও অভাব কখনো ঘেঁষতে পারে না—এমনই অলৌকিক ফজিলতের কথা উঠে এসেছে পবিত্র কোরআনের আলোকে। কেয়ামতের কঠিন বর্ণনা থাকলেও সূরাটি আজকের দুনিয়াতেও এনে দিতে পারে আর্থিক স্বস্তি ও আত্মিক শান্তি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস এবং সাহাবীদের জীবন থেকে পাওয়া উদাহরণে সূরাটির গুরুত্ব অসীমভাবে প্রমাণিত।
পবিত্র কোরআনের ৫৬তম সূরা ‘ওয়াকিয়া’—যার আয়াত সংখ্যা ৯৬ এবং রুকু সংখ্যা তিন। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। “ওয়াকিয়া” শব্দের অর্থ নিশ্চিত ঘটনা—এখানে কেয়ামতের ঘটনাকেই বোঝানো হয়েছে।
অভাব দূর করার অলৌকিক প্রভাব
সূরা ওয়াকিয়া সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস ও তাফসিরে বর্ণিত হয়েছে যে, কেউ যদি প্রতি রাতে সূরাটি তেলাওয়াত করে, তাহলে দারিদ্র্য কখনো তার কাছে ঘেঁষতে পারবে না। এমনকি না খেয়ে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকবে না। বিশেষ করে মাগরিবের নামাজের পর এই সূরা তেলাওয়াতের কথা বলা হয়েছে। কেউ যদি রাতের শুরুতেই তেলাওয়াত করে, তবুও সেই ফজিলত অর্জন করবে বলে মনে করা হয়।
সাহাবীর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা
এই ফজিলতের একটি অনন্য প্রমাণ পাওয়া যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর জীবনী থেকে। রাইহাকী শরীফে বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, যখন হযরত উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাকে মৃত্যুশয্যায় দেখেন, তখন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কিছু অনুদান দিতে চান যাতে তার মেয়েরা দারিদ্র্যে না পড়ে।
তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জবাবে বলেন, আপনি ভাবছেন আমার মেয়েরা অভাবে পড়বে? আমি এমনটা ভাবি না। কারণ আমি আমার মেয়েদের কড়া নির্দেশ দিয়ে রেখেছি, যেন তারা প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি—এ সূরা পাঠকারী কখনো অভাবগ্রস্ত হবে না।
কেয়ামতের ভয়াবহতা ও জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা
সূরার মাঝে কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা অত্যন্ত হৃদয়বিদারকভাবে বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, সেদিন পৃথিবী প্রচণ্ডভাবে কাঁপবে, পাহাড় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। বিচার দিবসে মানুষ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে:
- ১. আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্তরা,
- ২. ডান হাতের সঙ্গীরা,
- ৩. বাম হাতের সঙ্গীরা।
জাহান্নামের কঠিন শাস্তি এবং জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামতের বিশদ বর্ণনাও রয়েছে এই সূরায়।
সূরা ওয়াকিয়া শুধু পরকালের ভয়াবহতার বর্ণনাই দেয় না, এটি দুনিয়ার জীবনেও এনে দিতে পারে অর্থনৈতিক স্বস্তি ও অভাবমুক্তি। এটি সাহাবীগণের জীবনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রতিদিন রাতে এই সূরাটি তেলাওয়াত করা—এমন এক আধ্যাত্মিক অভ্যাস, যা আমাদের জীবনকে বদলে দিতে পারে, অন্তত অভাব-অনটনের চিন্তা থেকে।
ফরিদ