
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা প্রতি বছর যে উৎসবটি আন্তরিকতা, ত্যাগ ও সহানুভূতির অনন্য নজির হিসেবে পালন করেন, সেটিই ঈদুল আজহা, যাকে অনেকে কোরবানির ঈদ নামেও চেনেন। কিন্তু এই কোরবানির পেছনে যে ঘটনা ও ইতিহাস—তা কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং মানবজাতির জন্য চিরন্তন এক ত্যাগের পাঠ।
ইতিহাসের শিকড়: একজন পিতার অনন্য আত্মত্যাগ
পবিত্র কোরআন, বাইবেল ও তাওরাতে (হিব্রু বাইবেল) আমরা পাই একজন নবীর কথা—ইব্রাহিম (আ.), যিনি ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিম—এই তিনটি প্রধান ঐশীধর্মে সম্মানিত। তিনি স্বপ্নে দেখেন,আল্লাহ তাঁকে আদেশ দিচ্ছেন তাঁর প্রিয় পুত্রকে উৎসর্গ করতে।
ইব্রাহিম (আ.) সেই আদেশ পালন করতে প্রস্তুত হন। তাঁর পুত্র—যিনি ছিলেন অনুগত ও সাহসী, তিনিও রাজি হন ঈশ্বরের ইচ্ছায় জীবন দিতে। কিন্তু চূড়ান্ত সময়ে আল্লাহ তাঁদের এই অগাধ বিশ্বাস ও ত্যাগ দেখে একটি পশু পাঠিয়ে দেন, যা উৎসর্গ করার আদেশ হয়।
এই ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি মহান বার্তা:
সত্যিকারের বিশ্বাস কখনও অন্ধ নয়, বরং সচেতন ত্যাগ ও আত্মিক সংযোগের ফসল।
কোরবানির গভীর তাৎপর্য
ইসলাম ধর্মে কোরবানি মানে শুধু পশু জবাই নয়, বরং নিজস্ব চাওয়া-পাওয়ার উপর আত্মনিয়ন্ত্রণ, সমাজের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং মানবতার কল্যাণে কাজ করার শপথ।
পবিত্র কোরআনেও বলা হয়েছে:
"আল্লাহর কাছে পশুর গোশত বা রক্ত নয়, বরং পৌঁছে যায় তোমাদের আন্তরিকতা ও তাকওয়া (ভয় ও ভালোবাসা)।"
(সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৭)
সকলের জন্য একটি শিক্ষা
এই কাহিনি সব ধর্ম, সংস্কৃতি ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্যই প্রাসঙ্গিক। কারণ এখানে রয়েছে—
1. পিতার বিশ্বাস
2.সন্তানের আনুগত্য
3.আত্মত্যাগের মহত্ত্ব
4.সহানুভূতির বার্তা
এমন শিক্ষাগুলো প্রতিটি সমাজে দরকার, যেখানে মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়াবে, স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে ভালোবাসা বিলাবে।
আজকের রীতি: ত্যাগ, সহানুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
প্রতি বছর হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী জিলহজ মাসের ১০-১২ তারিখের মধ্যে মুসলমানরা গরু, ছাগল, ভেড়া কিংবা উট কোরবানি করেন। এই মাংসের একটি অংশ দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়—যেখানে থাকে সমতা, মানবতা ও সহযোগিতার স্পষ্ট ছোঁয়া।
কোরবানির ইতিহাস কেবল ধর্মীয় নয়, এটি এক বিশ্বজনীন মানবিক বার্তা। আমাদের সমাজেও যখন ভেদাভেদের দেয়াল উঠছে, তখন ইব্রাহিম (আ.)-এর এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়— ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এবং বিশ্বাসই মানুষকে সত্যিকারের মহৎ করে তোলে।
Mily