
ছবি:সংগৃহীত
আরাফাতের ময়দানে মুমিনগণ জড়ো হচ্ছেন, ঠিক যেমনটি নবীদের যুগে মানুষ আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ ও ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে একত্রিত হতো। এই জমায়েত যেন ফেরাউন ও মূসার যুগের সেই চিরন্তন সত্য-অসত্যের দ্বন্দ্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মিশরের শক্তিশালী শাসক ফেরাউন তার অত্যাচার ও দম্ভের মাধ্যমে আল্লাহর পথে চলা মানুষদের দমন করতে চেয়েছিল।
কিন্তু নবী মূসা (আ.) তার সম্প্রদায়কে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে এবং তাঁর উপর পূর্ণ ভরসা রাখতে উৎসাহিত করেন। মুমিনরা বলেছিল, “আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করি। হে আমাদের রব! আমাদেরকে জালিমদের জন্য পরীক্ষা বানিও না এবং তোমার দয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে রক্ষা করো।”
আল্লাহ তখন ওহী পাঠালেন মূসা ও হারূনের প্রতি, তারা যেন মিশরে তাদের সম্প্রদায়ের জন্য ঘর তৈরি করে, যেগুলোকে কিবলার দিকে রূপান্তর করে এবং সেখানে নামায কায়েম করে। সেই সঙ্গে মুমিনদের সুসংবাদ দিতে বলা হলো। মুমিনদের প্রার্থনা ছিল আরও গভীর: “হে আমাদের প্রভু! তুমি ফেরাউন ও তার সঙ্গীদেরকে পার্থিব জীবনে যেসব সম্পদ ও জাঁকজমক দিয়েছ, তা তাদেরকে তোমার পথ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে। তুমি তাদের সম্পদ ধ্বংস করে দাও এবং তাদের অন্তর কঠোর করে দাও, যাতে তারা ঈমান না আনে যতক্ষণ না তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করলেন এবং বললেন, “তোমাদের দোয়া কবুল হয়েছে, সুতরাং তোমরা সোজা পথে থেকো এবং তাদের পথ অনুসরণ করো না যারা সত্য অস্বীকার করে।”
এরপর সেই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটল, মূসা (আ.) বনী ইসরাইলদের নিয়ে আল্লাহর কুদরতে সমুদ্র পার হয়ে গেলেন। ফেরাউন ও তার বাহিনী তাদের ধাওয়া করল, কিন্তু সমুদ্রের পানি আবার মিলিত হয়ে তাদের সকলকে গ্রাস করল। মৃত্যুর মুখে পড়ে ফেরাউন বলল, “আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, যাঁর প্রতি মূসা বিশ্বাস করে।” কিন্তু তখন আর তার ঈমান কবুল হয়নি, কারণ তা হৃদয় থেকে আসেনি, বরং ছিল নিছক মৃত্যুভয় থেকে উচ্চারিত।
এই ঘটনা আমাদের শেখায় যে ঈমান, ধৈর্য এবং আল্লাহর উপর ভরসা মানুষকে যেকোনো দমন-পীড়ন থেকে মুক্ত করতে পারে। অন্যদিকে, অহংকার, অতিকায় ক্ষমতার দম্ভ এবং দেরিতে তওবা করার চেষ্টাকে আল্লাহ গ্রহণ করেন না। তাই প্রকৃত মুত্তাকীর মতো চলা, আল্লাহর রহমত কামনা করা এবং সত্যের পথে অটল থাকা প্রতিটি মুমিনের চিরন্তন দায়িত্ব।
আঁখি