
ছবি:- সংগ্রহকৃত
চট্টগ্রামের গ্রামবাংলার আঙিনায় কোরবানির ঈদ মানেই শুধু পশু কোরবানির উৎসব নয়, বরং তা ঘিরে গড়ে ওঠা এক অসাধারণ রন্ধন ঐতিহ্যও। প্রতি বছর ঈদুল আজহার আগে চট্টগ্রামের গ্রামীণ জনপদে দেখা যায় এক চিরাচরিত দৃশ্য—নারীরা রুটি-পরোটা তৈরি করতে ব্যস্ত। এটিই হয়ে উঠেছে একটি সাংস্কৃতিক নিদর্শন, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।
ঈদের দু-তিন দিন আগেই শুরু হয় প্রস্তুতি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে আটা মাখা, গোল রুটি বানানো, মাটির চুলায় একে একে সেঁকা। এসব কাজে ব্যস্ত থাকেন গ্রামের প্রবীণ ও গৃহিণী মহিলারা। বাঁশের চালুনিতে শুকানো হয় রুটি, রাখা হয় মাটির হাঁড়িতে। মাটির চুলায় ঘি ও তেলের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
রুটি ও পরোটাগুলো সাধারণত ঈদের দিন গরুর মাংসের ভুনা বা খাসির কালিয়া দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এটি শুধু একটি খাবার নয়—এ এক আনন্দের অংশীদার, যা পরিবার ও প্রতিবেশীদের একত্র করে। এটি কেবল রান্না নয়, বরং একটি আন্তরিক মিলনমেলার উপলক্ষ।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার এক প্রবীণ নারী জাহানারা খাতুন জানান, “এই রুটি বানানো আমাদের নানীদের সময় থেকেই চলে আসছে। এখন আমরা করছি, পরের প্রজন্মও করবে ইনশাআল্লাহ।” তিনি আরও বলেন, “ঈদের স্বাদ যেন এই রুটি ছাড়া পূর্ণ হয় না।”
এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজকর্মী রুহুল আমিন বলেন, “এই রুটি বানানোর ঐতিহ্য শুধু চট্টগ্রামে নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি অনন্য দিক। গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত, কারণ অনেকে এই সময়কালে বাড়তি আয়ের সুযোগও পান।”
বর্তমানে শহরাঞ্চলেও অনেকে এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে চান। অনলাইনে অর্ডার দিয়ে রুটি-পরোটা কিনে নিচ্ছেন শহরের মানুষ। এটি এই সংস্কৃতির আধুনিক রূপায়ণ বলে মনে করছেন সংস্কৃতি বিশ্লেষকরা।
এভাবেই কোরবানির ঈদ শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবে চট্টগ্রামের গ্রামীণ জীবনে এক বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছে। রুটি-পরোটা এখন শুধু খাবার নয়, বরং চট্টগ্রামের মানুষের আবেগ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতীক।
Jahan