
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার উইসকনসিনের ক্যাথলিক চ্যারিটিস ব্যুরোকে রাজ্যের নির্দিষ্ট কর থেকে অব্যাহতির পথ খুলে দিয়েছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত সংবিধানিক সুরক্ষার আওতায় আরও বেশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কর ছাড়ের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এই রায়।
এই সিদ্ধান্তটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুপ্রিম কোর্টের ধর্মীয় গোষ্ঠীদের পক্ষে দেয়া ধারাবাহিক রায়গুলোর মধ্যে একটি। এর মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় বিদ্যালয়ের জন্য সরকারি অর্থায়ন, ফুটবল মাঠে কোচের প্রার্থনার অনুমতি ইত্যাদি।
বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র সর্বসম্মত রায়ে লেখেন, “সরকারের উচিত এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। যখন সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার ধরন অনুযায়ী তাদের মধ্যে পার্থক্য করে, তখন এটি একটি বিশেষ ধর্মীয় পক্ষপাত তৈরি করে যা কঠোর বিচারিক পর্যালোচনার আওতায় পড়ে।”
ক্যাথলিক চ্যারিটিস ব্যুরো এবং এর চারটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যুক্তি দেয় যে, উইসকনসিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে কারণ তারা রাজ্যের বেকারত্ব কর থেকে অব্যাহতি পায়নি, যদিও গির্জাগুলো সেই সুবিধা পায়।
ব্যুরোটি নিজেকে উইসকনসিনের সুপিরিয়র ডায়োসিসের “সামাজিক মন্ত্রণালয় শাখা” হিসেবে পরিচয় দেয় এবং দাবি করে, তারা বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও দরিদ্রদের জন্য নানা ধরনের মানবসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
উইসকনসিন যুক্তি দেয়, ১৯৭১ সাল থেকে ক্যাথলিক চ্যারিটিস রাজ্যের বেকারত্ব বীমা প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছে কোনও আপত্তি ছাড়াই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭টি রাজ্য এবং ফেডারেল সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বেকারত্ব কর থেকে অব্যাহতির অনুরূপ বিধান রেখেছে। তাই এই রায়ের প্রভাব উইসকনসিন ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যে পড়তে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনও ক্যাথলিক চ্যারিটিসের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং জানিয়েছিল, ফেডারেল আইন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতি দেয় বলে তারা ব্যাখ্যা করে।
বিচারপতি থমাসের বক্তব্য:
আলাদাভাবে বিচারপতি ক্লারেন্স থমাস “গির্জার স্বায়ত্তশাসন” নীতির পক্ষে মত দেন এবং বলেন, এটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের অভ্যন্তরীণ কাঠামো নির্ধারণের অধিকার দেয়।
তবে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সিএনএন বিশ্লেষক স্টিভ ভ্লাডেক বলেন, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলাটি সংকীর্ণ ভিত্তিতে সমাধান করলেও ভবিষ্যতে এই “গির্জার স্বায়ত্তশাসন” বিষয়টি বড় ধরনের বিতর্কের কেন্দ্র হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের মতে, উইসকনসিনের সর্বোচ্চ আদালত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজকে “বিশুদ্ধভাবে ধর্মনিরপেক্ষ” হিসেবে অভিহিত করে ভুল করেছে, কারণ ক্যাথলিক বিশ্বাস অনুযায়ী তাদের মানবসেবা কার্যক্রমে প্রচার কার্যক্রম চালানো নিষিদ্ধ।
সোটোমেয়র লিখেন, “যে আইন ধর্মীয় মতবাদের উপর ভিত্তি করে ধর্মের মধ্যে পার্থক্য করে, তা স্পষ্টভাবে সংবিধানবিরোধী ধর্মীয় বৈষম্য।”
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস মার্চ মাসে শুনানিতে জানতে চান, যদি কেউ নিরামিষ খাওয়াকে ধর্মীয় বিশ্বাস বলে দাবি করে, তবে কি তাদের রেস্তোরাঁও কর অব্যাহতি পাবে?
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাথলিক অধিভুক্ত হাসপাতালগুলোর বিষয়টিও আলোচনায় আসে। ফ্রিডম ফ্রম রিলিজিয়ন ফাউন্ডেশন জানায়, ছয়টি বিশাল ক্যাথলিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭.৮৭ লাখ কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।
মামলার বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অন্যান্য কর্মীদের বেকারত্ব বীমা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে এবং তারা বেসরকারি ধর্মীয় বীমা ব্যবস্থার অধীনে থেকে ক্ষতিপূরণ না-ও পেতে পারেন।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়গুলো প্রায়ই ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যকার বিভাজনরেখা ঝুঁলিয়ে দিয়েছে। কোর্টের মতে, কিছু রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ধর্মকে বাদ দিতে গিয়ে সংবিধানের প্রতিষ্ঠা ধারা অনুসরণে অতিরিক্ত এগিয়ে গেছে।
তবে এই মামলায় বিচারপতি এলিনা কাগানও সতর্ক ছিলেন আদালতের পক্ষ থেকে ধর্মীয় কার্যকলাপের মূল্যায়নের বিরুদ্ধাচরণে। তার মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতের সীমা স্পষ্ট হওয়া উচিত।
উইসকনসিনের দুই বিচারপতি মত দেন, আদালত “প্রোটেস্ট্যান্ট দৃষ্টিভঙ্গি” থেকে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, যেখানে ধর্মীয় কার্যক্রম শুধুমাত্র প্রচারের সঙ্গে যুক্ত থাকলেই কর ছাড় পাওয়া যায়। অথচ ক্যাথলিক, ইহুদি এবং অন্যান্য অনেক ধর্মে এই ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ। এতে ধর্মীয় বৈষম্য তৈরি হয়, যা সংবিধান লঙ্ঘন করে।
ক্যাথলিক চ্যারিটিস জানায়, তাদের কর্মীরা বেকার হলে বীমার সুবিধা পাবে, তবে সেটি হবে গির্জা-সংযুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান থেকে, রাষ্ট্রের মাধ্যমে নয়। তবে বিরোধীপক্ষ বলছে, সবাই এই সুবিধা পাবে না এবং এটি নির্ভরযোগ্য নাও হতে পারে।
Jahan