ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্মৃতিতে অম্লান দিনাজপুর ভ্রমণ 

সোহেল রানা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা সদর

প্রকাশিত: ২১:১৫, ৫ জুন ২০২৫

স্মৃতিতে অম্লান দিনাজপুর ভ্রমণ 

বেশি আনন্দে ঘুম আসে না, অনেক সময় ক্ষুধার্ত থাকলেও কোন খুশির খবর শুনলে আর কেন যেন ক্ষুধা লাগে না৷  সারা রাত জেগে থাকলাম কারণ সকাল ৫ঃ৪৫ এ বাস। কোন ভাবে মিস করা যাবে না। বাসা থেকে বের হলাম ভোর ৪ঃ৩০টায়, যদিও হেঁটে বিআরটিসি বাস ডিপোতে যেতে সময় লাগে মাত্র ২০ মিনিট।

ডিপোতে এসে দেখলাম গাড়ি ছাড়ার পায়তারা করছে গাঁড়িটির হেলপার। আমরা ততো সময়ে পাশেই এক দোকানে  চা খাওয়ার জন্য গেলেও খেতে পারলাম মাত্র বিস্কুট। বিস্কুট খেয়ে বেশ তারাতাড়ি ডিপোতে এসে বসে থাকলাম আমাদের মতো অনেকে আসলো দিনাজপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে।  
 
প্রথমে ভেবেছিলাম পাবনা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার বেশি মানুষ কি হবে?  যা দেখলাম বাসের ডিপো থেকেই গাড়ির সিট ভর্তি মানুষ। গাড়ি যথাসময়ে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিলো। 

ভোরের ঠান্ডা বাতাস, শান্ত পরিবেশ খুবই আরাম দিলো। সারারাত ঘুম না হওয়ায় গাড়িতে একটু ঘুম ঘুম ভাব। নাটোর পর্যন্ত গেলাম না ঘুমিয়ে কারণ ঘুমালো তো আশে পাশের প্রকৃতিক দৃশ্য, বড় বড় নন্দানিক ইমারত দেখতে পাবো না। কিন্তু চোখের পাতা এমনি নুয়ে আসলো আর পারলাম না।  

গাড়িতে থাকা এক বৃদ্ধ মহিলা জরুরি প্রয়োজনে ওয়াশরুম যাবে গাড়িটি থামিয়ে দিতে বললো গাড়ির সুপারভাইজার চালক সাহেব নাটোর শহর থেকে একটু দূরে গিয়ে তেল পাম্পে গাড়ি থামালো বৃদ্ধচাচীর দেখা দেখি গাড়ির সকল যাত্রী  ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য নেমে পড়লো। সুপারভাইজার বললো গাড়ি আর বগুড়ায় থামবে না। বেশির ভাগ যাত্রী তো নেমে পড়েছে। তাই শোনার পর কয়েকজন যাত্রী বসে ছিলো তারাও নিচে নামলো। 

কথায় আছে  মেঘ না চাইতে বৃষ্টি পাম্পের সাথে থাকা এক বৃদ্ধ চাচার যেন তাই হলো সকল যাত্রী তার দোকান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে গাড়িতে উঠলো। 

মনে তখন খুবই কষ্ট পেলাম ভাইয়ার বাসায় যাচ্ছি বগুড়ার দই নিয়ে যেতে চাইলাম কিন্তু গাড়ি বগুড়া থামবে না৷ একবার সুপারভাইজার সাহেবকে বললাম আমাকে সে বললো আর থামাবো না ভাই। আমাদের আবার ঠিক ১ টায় দিনাজপুর থেকে পাবনায় রওনা দিতে হবে। কি আর করার দইয়ের জন্য মন খারাপ করার কোন দরকার নাই, পাশে থেকে বলে উঠল একজন।

তাই ভাবতেই নাটোর সিংড়া উপজেলায় গাড়ি রাস্তার দু'পাশে চলনবিলের পানিতে কি অপরুপ দৃশ্য। সিংড়া উপজেলা পাওয়ার সাথে সাথে মনে পড়লো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক মহোদয়ের কথা। ভাবলাম এই চলনবিলের কৃতি সন্তান দেশজুড়ে যার রয়েছে সুনাম। 

ঈদের পরের দিন আমাদের যাত্রা থাকায় রাস্তায় তেমন কোন পরিবহন নাই।  বাজার ঘাট বন্ধ মানে কোনো স্থানে যানজট নাই। সা সা করে গাড়ি চলছে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে। বগুড়া পার হয়ে একটু ঘুমানোর পর চোখ খুলে দেখি জয়পুরহাট চলে এসেছি। অনেক দূরে জয়পুরহাট উপজেলা পরিষদের সামনে গাড়ি থামালো, আমাদের জন্য কিছু শুকনা খাবার ও পানি কিনে গাড়িতে উঠে পরলাম। চারপাশে দেখতে দেখতে যাচ্ছি।  

দিনাজপুর জেলায় প্রবেশ করলাম হিলি এলাকায় গাড়ি। হিলি বর্ডার দেশে জুড়ে আলোচিত। প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে এই বর্ডার দিয়ে আমাদের দেশের মানুষের যোগাযোগ হয়। 

একটু গিয়ে বিজেপি চেক পোস্ট গাড়ি থামালো বিজেপির এক সদস্য চেক করতে উঠলো গাড়িতে। চেক করা শেষে গাড়ি আবার ছুটলো দিনাজপুর শহরের দিকে। তারিকুল ভাইয়াকে ফোন দিলাম (ভাইয়ার বাসায় যাচ্ছি) দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে গাড়ি থেকে নামলাম। নতুন শহর নতুন পরিবেশ ভাবতেই তরিকুল ভাইয়া বাইক নিয়ে আমাদের রিসিভ করার জন্য চলে এসেছেন। আমরা দুজন একটা অটোতে উঠে ভাইয়ার বাসায় গেলাম। 

বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে দিনাজপুর শহর দেখার জন্য বের হয়ে দিনাজপুর বড় মাঠে গেলাম কিছু সময় বড় মাঠটি দেখে রাতে বাসায় ফিরলাম। 

পরের দিন সকালের নাস্তা শেষ করে দিনাজপুর ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির, নয়াবাদ মসজিদ, রাজবাড়ী, সুখসাগর, রামসাগর দেখে শেষ করলাম সীমিত সময়ে। দুপুরে লাঞ্চ করে দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় দিকে রওনা দিলাম বাসে। উদ্দেশ্যে পঞ্চগড় জেলায় বোদা উপজেলায়। বাস টার্মিনালে গিয়ে নামার সাথে সাথে দেখি আমাদের রিসিভ করার জন্য মিরাজ ভাই এসে দাঁড়িয়ে আছে। 

তারপর সেখান থেকে তাদের বাসায় পৌঁছালাম মাত্র ৫ মিনিটে। চাচা মিয়া ( মিরাজ ভাইয়ার বাবা) বাড়ির গেটের সামনে অপেক্ষায় আছে আমাদের জন্য। জীবনের প্রথমবার তার সাথে দেখা,  আন্টির সাথেও প্রথম দেখা। আমাদের আন্টি বলল আগে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর খাওয়া দাওয়া করবে। তার আগে আর কোন কথা নয়। খাওয়া শেষ করে গল্প করা যাবে। এর মধ্যে সেখান কার আরেকজন তৌসিফকে ফোন দিলাম তৌসিফ আসলো। একসাথে খাওয়া দাওয়া করে গল্প গুজব করে পুরো বিকাল টা মিরাজ ভাইদের এলাকা দেখার সুযোগ হলো।  আমাদের আবার দিনাজপুর ফিরতে হবে সেখান দিনাজপুরের শেষ গাড়ি ৬:৩০ টায়। আমরা পৌঁছাতে পৌঁছাতে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। দিনাজপুরের গাড়িতে উঠতে পারলাম না। মনটা ভীষণ খারাপ হলেও কিছুই করার নাই। একটা লোকাল বাসে উঠলাম গাড়িটি যাবে আখের গুড় ও আচারের জন্য বিখ্যাত উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এই জেলার অন্যতম উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রাজা টংকনাথ চৌধুরী (আনু. ১৮৯০-১৯৪৮) মালদুয়ার পরগণার একজন জমিদার। নুরুল হক চৌধুরী (১৯০২-১৯৮৭) বাংলাদেশী আইনজীবী, রাজীতিবিদ, নরেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ (জন্ম : ১৪ এপ্রিল, ১৯১২ - মৃত্যু ৪ আগস্ট ১৯৯৪); ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিযুগের বিপ্লবী। এদের কথা ইতিহাস পড়ে জানতে পেরিছি। ঠাকুরগাঁও পৌছালাম সন্ধ্যা ৭ টায়। দিনাজপুরের গাড়ি পাচ্ছি না। এর মধ্যে চা খেতে গেলাম একটা দোকানে সেখানে পরিচয় হলো ঠাকুরগাঁও বাস টার্মিনালের মাস্টার (নাম টা ভুলে গেছি) তিনি আমাদের খুব সহযোগিতা করলেন। 
(প্রথম পর্ব) 

ভ্রমণকারী ও লেখক: সোহেল রানা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা সদর।

রাজু

×