ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যের দশহরার মেলা যেন সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।

প্রকাশিত: ২১:১৫, ৫ জুন ২০২৫

ফুলবাড়ীর ঐতিহ্যের দশহরার মেলা যেন সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন

ছবি: জনকন্ঠ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বসেছে ঐতিহ্যবাহী দশহরার মেলা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান উপলক্ষ্যে এবারের মেলা বসেছে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামের নীলকমল নদের তীরে। গঙ্গাস্নান উপলক্ষ্যে মেলা অনুষ্ঠিত হলেও ধর্ম বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সবাই মেলায় আসছেন। ঐতিহ্যবাহী এই মেলা যেন সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। 

বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় স্থানীয় পুরোহিত শ্রী বিপ্লব ভট্টাচার্যের পরিচালনায় গঙ্গাস্নান ও পূজা অনুষ্ঠিত হয়। গঙ্গাস্নান ও পুজোয় শত শত হিন্দু ধর্মাবলম্বী অংশগ্রহণ করেন। এরপর নীলকমল নদের তীরে বসে মেলা। এবারের মেলায় দূরদূরান্ত থেকে অনেক ব্যবসায়ী দোকান দিয়েছেন। 

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেলায় গৃহস্থালির জিনিসপত্র থেকে শুরু করে মাছ, মাংস,শুঁটকি, কসমেটিকস, মিষ্টান্ন, মুড়ি, মুড়কি, বাতাসা, পাপড়, গজা, চিড়ামুড়ি, মাটির খেলনা, চুড়ি ফিতা, ঝাল মুড়ি, ফাস্টফুড, কোদাল-খোনতা ,বেলচা, বাঁশের বাঁশিসহ আরও বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসেছে। ক্রেতা বিক্রেতার হাঁক ডাকে মুখরিত মেলাস্থল। ক্রেতারা মেলায় ঘুরেঘুরে পছন্দের জিনিসপত্র কিনছেন। আর বিক্রেতারা মেলায় ভালো বেচা-বিক্রির আশা করছেন।

রংপুরের কাউনিয়া থেকে এসে কাওসার আলী মেলায় মিষ্টির দোকান দিয়েছেন। তিনি বলেন, " আমার বাপ-দাদারা মিষ্টির দোকান করতো। তারাও ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় দোকান নিয়ে আসতো। আমিও তাদের সাথে এই মেলায় আসতাম। এবারে মেলার কথা শুনে আমি নিজেই দোকান নিয়ে এসেছি।"

মেলার এক কোনায় দেখা মিলল একসময়ে গৃহস্থলী কাজের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উড়ুণ গাইনের। কুড়িগ্রামের সদরের কাঁঠালবাড়ি থেকে এসে মেলায় উড়ুণ-গাইনের দোকান দিয়েছেন কাশেম আলী (৬৫)। তিনি বলেন,'"এই কলিযুগে উড়ুণ-গাইনের কদর আর আগের মতো নাই। হাটবাজারে এর বেচাকেনা বন্ধ হয়ে গেছে। মেলার খবর শুনে এখানে নিয়ে এসেছি আশা করি আজকে ভালো বেচাকেনা হবে।"

মেলায় আগত আমানন্দ রায় ও খোরশেদ আলম জানান, "এই দশহরার মেলা এই অঞ্চলের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মেলা। যুগ যুগ ধরে বড়ভিটা ইউনিয়নে কখনো ধরলার তীরে কখনো নীলকমলের তীরে এই মেলা বসে। মেলায় দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা দোকান নিয়ে আসেন। এই মেলায় ধর্ম বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সবাই আসে।  মেলা কে কেন্দ্র করে গোটা এলাকা জুড়ে আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করে। "

মেলার পরিচালক টুনকু ব্যাপারী বলেন, "গত ১৫ বছরে দশহরার মেলায় জুয়া, চাঁদাবাজির কারণে মেলার ঐতিহ্যের ক্ষতি হয়েছে। আমরা এলাকাবাসীরা এবার নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে এই দশহরার মেলার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নিয়েছি। উপজেলা প্রশাসন সুষ্ঠু সুন্দরভাবে মেলা আয়োজনে সহযোগিতা করছেন। আমরা আশা করি এবার সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে জুয়া ও চাঁদাবাজি মুক্ত মেলা অনুষ্ঠিত হবে।"

বড়ভিটা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জান্নাতি খাতুন বলেন," আমাদের ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরাম গ্রামে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দশহরার মেলা বসেছে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই ঐতিহ্যবাহী দশহরার মেলা হিন্দু মুসলিম সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। আমি আশা করি এই সৌহার্দ্য এবং সম্প্রীতি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।"

Mily

×