
ছবিঃ সংগৃহীত
ভূমি মালিকদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত। এখন থেকে সাতটি নির্দিষ্ট শ্রেণির দলিলের ক্ষেত্রে আর আলাদা করে নামজারি (মিউটেশন) করার প্রয়োজন হবে না। দলিল রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গেই একই দিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারিও সম্পন্ন হবে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চলা হয়রানি, বিলম্ব এবং অতিরিক্ত ব্যয় কমিয়ে আনতে যাচ্ছে সরকার।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আপাতত দেশের ২১টি সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে এ আধুনিক অটোমেশন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যে দেশের সব রেজিস্ট্রি অফিসেই এটি কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
কোন কোন দলিলে লাগবে না নামজারি?
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিচের সাত শ্রেণির দলিলের ক্ষেত্রে আলাদা করে নামজারি করতে হবে না:
-
বিক্রয় কবলা (সাব কবলা) দলিল
জমি বিক্রি ও ক্রয়ের মাধ্যমে সম্পাদিত এই দলিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হয়ে যাবে। -
হেবা দলিল
রক্ত সম্পর্কের মধ্যে বিনামূল্যে সম্পত্তি হস্তান্তরের এই দলিলেও এখন নামজারি প্রক্রিয়া নিজে থেকেই সম্পন্ন হবে। -
হেবা-বি-লাওজ দলিল
রক্ত সম্পর্কের বাইরেও হেবার মাধ্যমে হস্তান্তরিত জমির দলিলেও একই সুবিধা পাওয়া যাবে। -
বন্টননামা দলিল
পারিবারিক সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে করা দলিলেও নামজারি হবে অটোমেটেডভাবে। -
ওসিয়তনামা দলিল
কারো মৃত্যুর পর ওসিয়ত অনুযায়ী যিনি মালিক হবেন, দলিল রেজিস্ট্রেশনের দিনেই তার নামেও মিউটেশন সম্পন্ন হবে। -
এওয়াজ বদল দলিল
জমি বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পাদিত এই দলিলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারি হবে। -
না দাবি দলিল
যেখানে কোনো পক্ষ জমির ওপর দাবি ত্যাগ করে, সেই দলিলেও আর আলাদা নামজারি করার প্রয়োজন হবে না।
কিভাবে কাজ করবে নতুন পদ্ধতি?
এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ও উপজেলা এসি (ভূমি) অফিসের মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ফলে দলিল রেজিস্ট্রেশনের সঙ্গে সঙ্গে নামজারি তথ্য ভূমি অফিসে পৌঁছে যাবে এবং একই প্রক্রিয়ায় তা নিবন্ধিত হবে।
আগে দলিল রেজিস্ট্রেশনের পর ভূমি অফিসে আলাদাভাবে আবেদন করতে হতো নামজারির জন্য, যা ছিল সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং দুর্নীতিপ্রবণ। নতুন এই ডিজিটাল পদ্ধতি সে ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দেবে।
কারা এই সুবিধা পাবেন?
এই সুবিধা শুধুমাত্র নতুন দলিল রেজিস্ট্রেশনকারীদের জন্য প্রযোজ্য। পূর্বে যারা দলিল করেছেন, তাদের আগের নিয়মে নামজারি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
সরকার বলছে কী?
ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, "ভূমি মালিকদের ভোগান্তি লাঘব করতে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অটোমেশন প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির ঝুঁকিও অনেকাংশে হ্রাস পাবে।"
উপসংহার
সারাদেশব্যাপী এই আধুনিক পদ্ধতি চালু হলে জমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও সময়-সাশ্রয়ী হবে। ভূমি মালিকদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবের এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।
ইমরান