ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাশিয়া ও ট্রাম্পকে যে বার্তা দিতে ব্রিটেনের জোরদার সামরিক প্রস্তুতি!

প্রকাশিত: ১২:৩১, ৩ জুন ২০২৫

রাশিয়া ও ট্রাম্পকে যে বার্তা দিতে ব্রিটেনের জোরদার সামরিক প্রস্তুতি!

রাশিয়ার হুমকি ও বিশ্ব রাজনীতির নতুন মোড়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যুক্তরাজ্য নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছে। নতুন পারমাণবিক-চালিত আক্রমণাত্মক সাবমেরিন তৈরি, ইউরোপে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করা এবং দেশকে একটি "সাজসরঞ্জামে সজ্জিত যুদ্ধপ্রস্তুত জাতি" হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

সোমবার স্কটল্যান্ডের একটি নৌ জাহাজ নির্মাণ কারখানায় কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "রাশিয়া যে হুমকি সৃষ্টি করছে, তা উপেক্ষা করার সময় আর নেই।" তিনি এটিকে ৩০ বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা নীতিতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে আখ্যা দেন।


২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনের পর থেকে যুক্তরাজ্যসহ ন্যাটোর সদস্যরা প্রতিরক্ষা ব্যয় এবং প্রস্তুতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। ব্রিটিশ সরকার যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে, তা স্টারমারের নির্দেশে পরিচালিত হয় সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব ও ন্যাটো মহাসচিব জর্জ রবার্টসনের নেতৃত্বে। এই পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করেই নেওয়া হচ্ছে নতুন প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা।

এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সাবমেরিন নির্মাণ, অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধি, সাইবার আক্রমণ মোকাবিলায় নতুন কমান্ড গঠন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শেখা শিক্ষা কাজে লাগিয়ে ড্রোন ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া।

কী থাকছে এই প্রতিরক্ষা পরিকল্পনায়?
সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গঠিত AUKUS চুক্তির আওতায় সর্বোচ্চ ১২টি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরি করবে। এছাড়া ব্রিটেনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারে ১৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ, ছয়টি নতুন অস্ত্র কারখানা, ৭,০০০টি ব্রিটিশ তৈরি দূরপাল্লার অস্ত্র, নতুন ড্রোন ও স্বয়ংক্রিয় জাহাজসহ ‘হাইব্রিড নৌবাহিনী’ গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

একই সঙ্গে ১ বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে যুক্তরাজ্যের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও আধুনিকায়ন করা হবে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষায় গঠিত হতে যাচ্ছে ‘হোম গার্ড’, যেটিকে অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘Dad’s Army’-র সঙ্গে তুলনা করছেন।

প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলছেন, এই প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ শুধু নিরাপত্তা নয়, দেশের অর্থনীতিতেও বড় ভূমিকা রাখবে। হাজার হাজার দক্ষ মানুষের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে।

রাশিয়াকে বার্তা, ট্রাম্পকেও
প্রতিরক্ষা সচিব জন হিলি বলেছেন, এই উদ্যোগ সরাসরি রাশিয়াকে একটি বার্তা দেবে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা – যা বর্তমানে প্রায় ৭৪ হাজার, গত দুই শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন – তা ২০৩০ সালের আগ পর্যন্ত বাড়বে না।

সরকার বলছে, ২০২৭ সালের মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে। তবে ৩ শতাংশে নেওয়ার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, তা এখনই নিশ্চিত নয়। এদিকে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার বিদেশি সাহায্য খাতে কাটছাঁট করেছে, যা নিয়ে দেশটির অভ্যন্তরেও বিতর্ক রয়েছে।প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির প্রতিরক্ষা মুখপাত্র জেমস কার্টলিজ বলেন, "বাজেট ছাড়া প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা কেবল একটি ইচ্ছার তালিকা।"

ইউরোপের প্রতিরক্ষায় নেতৃত্ব
এই ঘোষণার আরেকটি উদ্দেশ্য আমেরিকার সাবেক ও পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখানো যে, ইউরোপ এখন নিজের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। ট্রাম্প বহুবার অভিযোগ করেছেন, ন্যাটো সদস্যরা নিজেদের সুরক্ষার দায়িত্ব যথাযথভাবে নিচ্ছে না।

এ অবস্থায় স্টারমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, “ন্যাটো গঠনের পর থেকে ব্রিটেন এবার সবচেয়ে বড় অবদান রাখবে।” তিনি বলেছেন, “আমরা কখনও একা যুদ্ধ করব না। আমাদের প্রতিরক্ষা নীতির ভিত্তি হবে ন্যাটো।”

পরিকল্পনা, তবে রূপরেখা নয়?
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা RUSI-এর সামরিক বিজ্ঞান পরিচালক ম্যাথিউ স্যাভিল বলেন, এই পর্যালোচনায় ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে ঠিকই, তবে এর বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট রূপরেখা এখনও অনুপস্থিত।

“এটি একটি উচ্চারণ মাত্র,” বলেন স্যাভিল। “এখনও পথনির্দেশ তৈরি হয়নি।”


রাশিয়ার আগ্রাসন, ট্রাম্পের অনিশ্চিত পররাষ্ট্রনীতি এবং ইউরোপের নতুন প্রতিরক্ষা চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে ব্রিটেনের এই পদক্ষেপকে অনেকেই যুগান্তকারী মনে করছেন। তবে কাগজে কলমে থাকা প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তার উত্তর দেবে আগামী কয়েক বছর। বাস্তবিক প্রস্তুতির সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছার মেলবন্ধনেই তৈরি হবে একবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কাঠামোর নতুন চেহারা।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/yc5437ub

আফরোজা

×