ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পচা নর্দমার পানিতেই এখন ফিলিস্তিনি মায়ের জীবনযাপন

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৫ জুন ২০২৫

পচা নর্দমার পানিতেই এখন ফিলিস্তিনি মায়ের জীবনযাপন

ছবি: সংগৃহীত

৫৩ বছরের প্রৌঢ় ফিলিস্তিনি নারী উম্মে মোহাম্মদ এখন বাস করছেন একটি নরদমার পাশেই। থালাবাসন ধুতে হচ্ছে পচা পানিতে। একসময় তার ঘরবাড়ি ছিল, ছিল নিরাপদ আশ্রয়। এখন বাস্তুচ্যুত, খোলা আকাশের নিচে তাবুতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। নরদমার পচা পানি দিয়েই সারতে হচ্ছে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় কাজ।

এই দুঃসহ জীবনে উম্মে মোহাম্মদের একমাত্র সান্ত্বনা—পরিবারের কিছু প্রিয়জন এখনো বেঁচে আছেন। তাদের মতোই আরও কিছু পরিবার জায়গা পেয়েছে এই গন্ধযুক্ত, জীবাণুযুক্ত স্থানে।

শুধু মানুষই নয়, আশপাশে ঘোরাফেরা করছে পোকামাকড়, মশা, ইঁদুর, বেজি আর কুকুর। এত বড় পৃথিবীতে একটু ঠাঁই পেলেও মৃত্যু যেন পিছু ছাড়ছে না। রাত নামলেই এখানে শুরু হয় বোমাবর্ষণ। হোয়াইট হাউস কিংবা সৌদি রাজপ্রাসাদের প্রাসাদ থেকে এই বাস্তবতা অনুভব করা সম্ভব নয়।

উম্মে মোহাম্মদের পরিবার আগে গাজার বেইত হানুনে বসবাস করতো। ইসরাইলি হামলার কারণে তারা আশ্রয় নেন একটি ক্যাম্পে। কিন্তু রমজান মাসের পর সেখান থেকেও তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। শেষমেশ কোনো আশ্রয় না পেয়ে থাকতে হচ্ছে এই নরদমার পাশেই।

ইসরাইলি বাহিনী নিয়মিত লিফলেট ছড়িয়ে নিরাপদ এলাকায় যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু উম্মে মোহাম্মদ প্রশ্ন করেন—কোথায় সেই নিরাপদ জায়গা?
তিনি জানান, সারারাত আমাদের এলাকায় বোমাবাজি হয়। শেখ রাদোয়ান এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু যাব কোথায়?

তার পরিবারের সদস্য সাত-আটজন শিশু রয়েছে, নাতি-নাতনিরাও আছে। যেন তারা নরদমায় পড়ে না যায়, সেই দুশ্চিন্তায় চোখে চোখে রাখতে হয় সবাইকে। তিনি বলেন, একবার একটা কুকুর আমাদের তাবুতে ঢুকে পড়েছিল। প্রতিবেশীরা চিৎকার না করলে আমরা বের হতেও পারতাম না।

এই ঘিঞ্জি, নোংরা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রোগবালাই। শিশুরা ভুগছে অপুষ্টিতে। নরদমার পাশেই দেখা যায় পঙ্গপালের মতো পোকা আর বিশাল ব্যাঙ। উম্মে মোহাম্মদ বলেন, এই জায়গায় গাধারাও থাকতে পারবে না। অথচ আমরা মানুষ হয়েও এখানে থাকছি। এটা মানুষের থাকার জায়গা না।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর অবস্থানকেও বুঝে ফেলেছেন তিনি। কূটনৈতিক ভাষার ফাঁক বুঝে সরাসরি বলেন, “আমরা সব দেশকে বলেছি—আমেরিকাকে বলেছি, তারা এই সংকট সমাধান করুক। তারা প্রতিদিন বলে আগামীকাল চমক আছে, পরশু চমক আছে, যুদ্ধ বন্ধ করতে চাই। কিন্তু এসব মিথ্যা কথা। আমরা বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ দেখি না।”

জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজায় আর কোনো নিরাপদ জায়গা অবশিষ্ট নেই। উপত্যকার লাখ লাখ মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত।
জাতিসংঘ শুক্রবার জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

ফরিদ

×