ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আপনার হার্ট কি নীরব ঝুঁকিতে? রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমছে কিনা বোঝার ৬টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:৫৭, ৩ জুন ২০২৫

আপনার হার্ট কি নীরব ঝুঁকিতে? রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমছে কিনা বোঝার ৬টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ

বুকে ব্যথা নেই মানেই আপনি হার্টের সমস্যামুক্ত, এমন ভাবার সময় এখন আর নেই। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ একটি "নীরব ঘাতক"। এর মূলে থাকে এক মারাত্মক কারণ হার্টের রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমে যাওয়া। দিনে দিনে জমে থাকা এই 'খুনি চর্বি' একসময় হার্টের রক্তনালিকে আংশিক বা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারে। এবং সেই পথ ধরেই ঘটে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের সরবরাহে বাধা, যার শেষ পরিণতি হতে পারে হার্ট অ্যাটাক।

তবে কোলেস্টেরল জমা যে নীরবে ঘটে, তা একেবারে চুপিচুপি নয়। শরীর কিছু সংকেত পাঠায়। যেগুলো সঠিক সময়ে চেনা গেলে, বড় বিপদ ঠেকানো সম্ভব। চলুন জেনে নিই হৃদয়ের রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমলে শরীর কীভাবে তা জানিয়ে দেয়।

১. বুকের মাঝখানে বা বাম পাশে চাপ বা জ্বালাভাব
এটাই সবচেয়ে কমন এবং গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। অনেকেই এটিকে ভুলবশত অ্যাসিডিটির সমস্যা মনে করেন। কিন্তু বুকের মাঝখানে ভারী ভাব, জ্বালা বা চাপ অনুভব করা, যা কাজের সময় বাড়ে এবং বিশ্রামে কিছুটা কমে, সেটি হার্টে রক্ত চলাচলের বিঘ্নের ইঙ্গিত দিতে পারে। এই অনুভূতি কাঁধ, ঘাড় বা হাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

২. হঠাৎ নিঃশ্বাসে কষ্ট বা হাঁপ ধরা
আপনার কি আগের মতো সিঁড়ি ভেঙে ওঠা যাচ্ছে না? হালকা পরিশ্রমেই কি দম বন্ধ হয়ে আসছে? এমনটা হলে অবহেলা করবেন না। কোলেস্টেরল জমে রক্তনালি সরু হয়ে গেলে, হার্ট পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। এর ফলে ফুসফুসেও অক্সিজেন সরবরাহ কমে, এবং দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট।

৩. অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া
একই কাজ আগে আপনি সহজে করতে পারতেন। এখন কিছুক্ষণ হাঁটলেও ক্লান্ত লাগে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে? এটি নিছক বয়সের কারণে নয়, বরং হার্ট ঠিকমতো কাজ না করলে এমনটা ঘটে। হৃদযন্ত্রে কোলেস্টেরলের জমাট রক্তপ্রবাহকে ধীর করে দেয়, যার ফলে দেহে শক্তি পৌঁছায় কম, ক্লান্তি বাড়ে।

৪. ঘনঘন মাথা ঘোরা, বমি ভাব বা মাথাব্যথা
রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে মস্তিষ্কেও রক্ত ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে হতে পারে হঠাৎ মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখা বা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা। অনেকের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা ও বমিভাবও দেখা দেয়, যা অনেক সময় অজান্তেই হৃদযন্ত্রের সমস্যার সূচনা হতে পারে।

৫. ঠান্ডা লাগা বা ঝিনঝিনে ভাব হাত-পায়ে
রক্তপ্রবাহ ঠিকভাবে না হলে হাত-পায়ে অস্বাভাবিক ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে। বিশেষ করে রক্তনালিতে চর্বি জমে গেলে হাত বা পায়ে ঝিনঝিনে ভাব, অসাড়তা বা হালকা ব্যথা দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণভাবে অবহেলা করা হয়, কিন্তু নিয়মিত হলে এটি চিন্তার বিষয়।

৬. রাতে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসা
ঘুমের মধ্যে যদি হঠাৎ ঘাম দিয়ে উঠে বসে পড়েন বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তাহলে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিন। এটি কোলেস্টেরল সংক্রান্ত হৃদরোগের অশনিসংকেত হতে পারে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি।


কাকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়?
যাদের রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, যারা ধূমপান করেন, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে তারা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। ৪০ বছরের পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিশেষ করে লিপিড প্রোফাইল করানো উচিত।

কোলেস্টেরল জমা ঠেকাতে করণীয়

ট্রান্সফ্যাট এবং অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন


হৃদরোগ হঠাৎ করে আঘাত হানে না, এটি ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরে গড়ে ওঠে। তাই নিজের শরীরকে বুঝুন, লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দিন। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে হৃদরোগ প্রতিরোধ সম্ভব, এবং একটি সুস্থ, কর্মক্ষম জীবনযাপন নিশ্চিত করা যায়।


সূত্র:Mayo Clinic

আফরোজা

×