
ছবিঃ সংগৃহীত
ইসলামী শরিয়াহ এবং বাংলাদেশের প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইনের আলোকে এমন কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণির ব্যক্তি আছেন, যারা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে উত্তরাধিকার (ওয়ারিশ) সম্পত্তি থেকে স্থায়িভাবে বঞ্চিত হন। নিচে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. ১৯৬১ সালের ১৫ই জুলাই পূর্ববর্তী ঘটনা: পিতার জীবদ্দশায় সন্তান মারা গেলে তার সন্তানরা উত্তরাধিকার পাবে না
যদি কোনও ব্যক্তি তার পিতার জীবিত থাকাকালে মারা যান এবং মৃত্যুর সময় যদি তার নিজের সন্তান থাকে, তবে সেই সন্তানরা তাদের দাদার (বা নানার) সম্পত্তির ওয়ারিশ হবেন কিনা, তা নির্ভর করে মৃত্যুর তারিখের ওপর।
বিশেষ আইন (The Muslim Family Laws Ordinance, 1961) অনুসারে, যদি উত্তরাধিকারীর পিতা ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাইয়ের পরে মৃত্যুবরণ করেন, তবে তিনি পিতার (যে মারা গিয়েছেন) প্রতিনিধিত্বে সম্পত্তির অধিকারী হবেন। অর্থাৎ, দাদার সম্পত্তিতে সন্তানের পিতার জায়গায় তারা উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচিত হবেন।
কিন্তু যদি মৃত্যুর ঘটনা ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাইয়ের পূর্বে ঘটে, তাহলে সেই প্রতিনিধিত্ব (Representation) কার্যকর হবে না। অর্থাৎ, সন্তান তার পিতার পক্ষ থেকে সম্পত্তি দাবি করতে পারবে না।
২. হেবা বা বিক্রিত সম্পত্তি: জীবিত থাকা অবস্থায় দানকৃত/বিক্রিত সম্পত্তিতে ওয়ারিশদের অধিকার নেই
কোনও ব্যক্তি যদি জীবিত থাকা অবস্থায় তার সম্পত্তি কাউকে হেবা (দান) করে দেন বা বিক্রি করে দেন এবং সেটি যদি রেজিস্টার্ড দলিল দ্বারা প্রমাণিত হয়, তাহলে তার মৃত্যুর পর বাকি উত্তরাধিকারীগণ সেই হেবা/বিক্রিত সম্পত্তির উপর কোনও দাবি করতে পারবেন না।
তবে যদি হেবার দলিল রেজিস্ট্রেশনকৃত না হয়, তাহলে সেটি বৈধ বিবেচনা করা হবে না এবং সকল ওয়ারিশগণ সেই সম্পত্তির অংশ পাবে।
৩. হত্যাকারী ওয়ারিশ: হত্যাকারী উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত
ইসলামী আইন অনুযায়ী, যদি কোনও ওয়ারিশ তার উত্তরাধিকার ছাড়ার (যেমন পিতা বা মাতা) হত্যা করে, তাহলে সেই ব্যক্তি তার অংশ পাবে না। কেননা, একজন হত্যাকারী ওয়ারিশ হওয়ার যোগ্য নয়।
৪. ধর্মত্যাগকারী ব্যক্তি: ধর্মান্তরিত ব্যক্তির উত্তরাধিকার বাতিল
যদি কোনও মুসলিম ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন, তবে তিনি ইসলামি শরিয়াহ অনুযায়ী তার মুসলিম আত্মীয়দের সম্পত্তিতে ওয়ারিশ হতে পারবেন না।
৫. পৈতৃক ভিটার সম্পত্তি থেকে কন্যাদের বঞ্চিত করা – একটি ভুল প্রথা
বাংলাদেশে প্রচলিত একটি ভুল সামাজিক ধারণা হলো, কন্যারা পৈতৃক ভিটার (বাড়ির) সম্পত্তিতে অংশ পাবে না। বাস্তবে এটি ইসলামী শরিয়াহ বা দেশের আইনে সমর্থিত নয়।
পবিত্র কোরআনের সূরা নিসা (আয়াত ১১–১৩) অনুযায়ী, কন্যারা সকল প্রকার সম্পত্তিতে ওয়ারিশ – আবাসিক, বাণিজ্যিক, কৃষিজমি, এমনকি পৈতৃক ভিটার ক্ষেত্রেও। তবে সমাজিক বাস্তবতায় অনেক সময় বোনেরা সহানুভূতি দেখিয়ে তাদের অংশ ভাইদের কম মূল্যে বিক্রি করে দেয়, যা সম্পূর্ণরূপে ঐচ্ছিক।
এই পাঁচ শ্রেণির ব্যক্তি কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে আইনি ও ধর্মীয়ভাবে উত্তরাধিকার (ওয়ারিশ) সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন:
- ১৯৬১ সালের ১৫ জুলাই পূর্বে পিতার জীবদ্দশায় মারা যাওয়া সন্তানের সন্তান
- হেবা বা বিক্রয় করা রেজিস্টার্ড সম্পত্তিতে অন্যদের দাবি অগ্রহণযোগ্য
- হত্যাকারী ওয়ারিশ সম্পত্তি পাবে না
- ইসলাম ত্যাগকারী ওয়ারিশ পাবে না
- কন্যারা ভিটার সম্পত্তিতে অংশ পাবে না – এই ধারণাটি ভুল এবং শরিয়াহবিরোধী
শরিয়াহ এবং আইনের সঠিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে আমাদের উচিত ওয়ারিশদের যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করা।
মারিয়া