
ছবিঃ সংগৃহীত
পিতার মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তিতে ছেলে সন্তানেরা অধিকার দাবি করলেও অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বোনদের তাদের ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত করা হয়। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে (ফারায়েজ অনুযায়ী) মেয়ের সম্পূর্ণ অধিকার থাকলেও বাস্তবে তারা তা পান না। এই পরিস্থিতিতে একজন বোন কীভাবে নিজের প্রাপ্য ফিরে পেতে পারেন—তা নিয়ে নিচে ধাপে ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রথম ধাপ: আপোষ-মীমাংসার চেষ্টা
সবার আগে পারিবারিকভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করতে হবে। পরিবারের অভিভাবক বা প্রবীণদের সাথে বসে সম্পত্তির সুষ্ঠু বন্টনের দাবি জানাতে হবে। যদি ভাইয়েরা রাজি থাকে, তাহলে “বণ্টন দলিল” (partition deed) তৈরি করে সমস্যা সমাধান করা যায়। এতে ভবিষ্যতের জন্য ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।
দ্বিতীয় ধাপ: নামজারি করে নিজের অধিকার নিশ্চিত করা
আপোষে সমাধান না হলে আপনাকে অবশ্যই জমির ওপর নিজের নামে নামজারি (mutation) করিয়ে নিতে হবে।
নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
-
পিতা-মাতার মৃত্যু সনদ
-
ওয়ারিশ সনদ
-
সংশ্লিষ্ট জমির দলিলপত্রের কপি
এসব সংগ্রহ করে ভূমি অফিসে গিয়ে নামজারির আবেদন করতে হবে। মুসলিম ফারায়েজ অনুযায়ী হিসাব করে আপনার নামে জমির অংশ নামজারি করে দেওয়া হবে। এতে করে ভাইয়েরা আর আপনার অংশের জমি বিক্রি করতে পারবে না।
বিশেষ সমস্যা:
অনেক সময় দেখা যায়, ভাইয়েরা আগেই সমস্ত জমি নিজেদের নামে নামজারি করে ফেলেছে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসে গিয়ে “মিস কেস” (objection case) ফাইল করতে হবে। প্রমাণসহ উপস্থাপন করলে প্রশাসন পূর্বের নামজারি বাতিল করে সঠিকভাবে নতুন নামজারি সম্পন্ন করবে।
তৃতীয় ধাপ: স্থানীয় সালিশ পরিষদের দ্বারস্থ হওয়া
নামজারি করার পরও যদি ভাইয়েরা সম্পত্তি বুঝিয়ে না দেয়, তাহলে স্থানীয় সালিশি পরিষদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাওয়া যেতে পারে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ সভায় বসে ভাইদের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং নিরপেক্ষ বণ্টনের দাবি জানানো যেতে পারে।
চতুর্থ ধাপ: আদালতের আশ্রয় নেওয়া
সালিশেও সমাধান না হলে শেষ ধাপে যেতে হবে আদালতে।
এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বণ্টন মামলা (partition suit) দায়ের করতে হবে। আদালত সব তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে রায় প্রদান করবে এবং আপনাকে আপনার প্রাপ্য অংশ বুঝিয়ে দেবে।
উপসংহার:
বোনেরা যদি পিতার সম্পত্তিতে তাদের ন্যায্য অধিকার না পান, তাহলে নিরাশ না হয়ে আইনি পথ অনুসরণ করা জরুরি। প্রথমে পারিবারিক সমাধানের চেষ্টা, পরবর্তীতে নামজারি এবং প্রয়োজনে সালিশ বা আদালতের মাধ্যমে নিজের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। আইনের সঠিক প্রয়োগ জানলে, কেউ আর বঞ্চিত থাকবে না।
নিজের অধিকার জানুন, প্রয়োজনে দাবি করুন।
ইমরান