
ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালের “ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন” এবং তার সংশ্লিষ্ট বিধিমালা অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বহু জমির দলিল বাতিল হতে চলেছে। সরকারের লক্ষ্য—সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ এবং ভুয়া, জাল দলিল ও অবৈধ দখল রোধ করা। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব জমির দলিল বাতিল হতে পারে, সেগুলোর ধরন নিচে তুলে ধরা হলো:
১. জাল দলিলভিত্তিক জমি
যেসব জমি জাল দলিল ব্যবহার করে সাধারণ মানুষ দখলে রেখেছে, সেগুলো খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি জমি হিসেবে পুনর্দখল করা হবে।
২. সরকারি খাস জমি
যারা বন্দোবস্তপ্রাপ্ত খাস জমি বিক্রি করেছেন বা ব্যবহারের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন, তাদের দলিল বাতিল হবে। অনেকেই নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত বিক্রয় করেছেন যা বৈধ নয়।
৩. অর্পিত সম্পত্তি
হিন্দু সম্প্রদায়ের ভারতে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের ফেলে যাওয়া জমি—যা অবৈধভাবে অন্যদের নামে দলিল হয়েছে—তা বাতিল হবে। সরকার এসব জমি বিডিএস জরিপের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেবে।
৪. দেবত্বর ও ওয়াকফ সম্পত্তি
মন্দির, মঠ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দানকৃত জমি যারা জাল দলিল করে নিজেদের নামে নিয়েছেন, সেগুলোও বাতিল হবে এবং মূল প্রতিষ্ঠানকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
৫. অতিরিক্ত জমি বিক্রয়
যারা নিজেদের মালিকানার পরিমাণের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করেছেন (বিশেষত ওয়ারিশি জমির ক্ষেত্রে), সেই দলিলও বাতিল হতে পারে।
৬. দাগের অমিল
এক দাগে জমি কিনে অন্য দাগে ভোগদখলকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হলে, সেই জমির দলিলও বাতিল হবে।
৭. অবৈধ হেবা দলিল
আইন বহির্ভূতভাবে গ্রামের সাধারণ মানুষ বা অযোগ্য ব্যক্তিদের নামে হেবা দলিল করা হলে, তা বাতিলের আওতায় পড়বে।
৮. অবিভক্ত ওয়ারিশি জমি
বন্টননামা দলিল বা আদালতের রায় ছাড়া কেউ যদি সম্পত্তি বিক্রি করেন, সেই বিক্রয়ের দলিল বাতিল হবে।
৯. এক জমির একাধিক দলিল
একটি জমি একাধিকবার বিক্রি হলে এবং প্রথম দলিল বৈধভাবে রেজিস্ট্রি করা থাকে, তাহলে পরবর্তী দলিল বাতিল হবে।
১০. পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি অপব্যবহার
যারা কেবল দেখাশোনার উদ্দেশ্যে দেওয়া পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি ব্যবহার করে জমি বিক্রি করেছেন, তাদের দলিলও বাতিল হবে।
সতর্কতা:
যেসব ব্যক্তি জমি কেনার কথা ভাবছেন, তাদেরকে যথাযথ কাগজপত্র যাচাই, বন্টননামা দলিল, আদালতের রায়, নামজারি এবং চৌহদ্দি দেখে জমি কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে দেশের ভূমি ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। যারা অবৈধভাবে জমির দখল বা মালিকানা দাবি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা এবং সব ধরনের দালিলিক প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আসিফ