
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রাম যেন এক টুকরো হারিয়ে যাওয়া বাংলা। খড়ের স্তুপ, গোবরের লাকড়ি, ঢেঁকি, চাল ভাজার রান্নাঘর থেকে শুরু করে বাঁশের তৈরি ধানের গোলা—সবকিছুর মাঝেই আছে পুরনো দিনের শেকড়ের গন্ধ। আর সেই গন্ধকে আরও জীবন্ত করে রেখেছে একে বেঁকে বয়ে চলা করতোয়া নদী, যার বুকে এখনো দেখা মেলে পালতোলা ডিঙ্গি নৌকার।
সুলতানপুরের উঠোনে দেখা মিলল খড়ের স্তুপ, পাশে বাঁধা গরু। এটি শুধুই পশুখাদ্য নয়—একটি জীবিকা, একটি জীবনযাত্রার নিদর্শন। আধুনিক যন্ত্রের যুগে এই দৃশ্য যেন এক সময়ের চিহ্ন বহন করে।
রোদের তাপে শুকানো হচ্ছে গোবরের তৈরি লাকড়ি। এটি এখানকার অনেক বাড়িতে এখনো রান্নার মূল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী।
মাটির চুলার পাশে বসে গ্রামীণ নারীরা চাল ভাজছেন। চুলার আগুনে হাঁড়ির ভেতরে বুদবুদ শব্দ যেন সময়কে থামিয়ে রাখে। চাল ভাজা এখানে শুধুই খাবার নয়—একটি সংস্কৃতি।
সুলতানপুরের এক বাড়ির আঙিনায় দেখা যায় একটি ঢেঁকি, এখনো ব্যবহারযোগ্য। ঢেঁকি শুধু ধান ভানার যন্ত্র নয়—একটি জীবনপ্রণালী, নারীর শ্রম, আর একসময়কার গান-বাজনার উৎস।
ঘরের এক কোণে বাঁশের তৈরি বিশাল ধানের গোলা। একসময় গৃহস্থ পরিবারগুলোর সম্মানের প্রতীক ছিল এই গোলা। এখন এটি যত না শস্য সংরক্ষণের জায়গা, তার চেয়ে বেশি ঐতিহ্যের নিদর্শন।
সুলতানপুর গ্রামের পাশ দিয়ে এঁকে-বেঁকে বয়ে গেছে করোতোয়া নদী। এই নদীর পাড় ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে গ্রামের জীবন। নদীর বুকে এখনো দেখা যায় পালতোলা ডিঙ্গি নৌকা, যা একসময় ছিল যোগাযোগ ও যাতায়াতের প্রধান বাহন। সেই পাল আজও বাতাসে ফুলে উঠে যেন বাংলার প্রাণ ফিরিয়ে আনে।
সুলতানপুর শুধু একটি গ্রাম নয়—এটি বাংলার শেকড়ের প্রতিচ্ছবি। এখানকার প্রতিটি খড়ের স্তুপ, ঢেঁকি, গোলা আর পালতোলা নৌকা যেন বলে—"আমরা এখনো আছি, হারিয়ে যাইনি।" সরেজমিনে ঘুরে দেখা এই সুলতানপুর আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কোথা থেকে এসেছি এবং কী হারাতে বসেছি।
নোভা