ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নতুন নিয়মে পরিবর্তন হলো বেদখল জমি উদ্ধারের পদ্ধতি, লাগবে না আর সাক্ষী-প্রমাণ

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৩, ২৮ মে ২০২৫

নতুন নিয়মে পরিবর্তন হলো বেদখল জমি উদ্ধারের পদ্ধতি, লাগবে না আর সাক্ষী-প্রমাণ

ছবিঃ সংগৃহীত

বেদখল জমির মালিকদের জন্য এসেছে আশাজাগানিয়া খবর। জমি হারিয়ে আইনি লড়াইয়ে ন্যায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার পথ এতদিন ছিল দীর্ঘ ও জটিল। তবে দেওয়ানী কার্যবিধি সংশোধনের মাধ্যমে এখন বেদখল জমি উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। নতুন নিয়মে এখন আর জমির মালিকানা প্রমাণে সাক্ষী হাজির করতে হবে না, কেবল বৈধ দলিল থাকলেই আদালতের মাধ্যমে জমি উদ্ধার সম্ভব।

সাক্ষী জোগাড়ের ঝামেলা শেষ

বছরের পর বছর ধরে জমি হারানো ভুক্তভোগীরা আদালতে গিয়ে প্রমাণ দিতে হিমশিম খেতেন। দলিল থাকা সত্ত্বেও জমির দখল কতদিন ধরে হারানো হয়েছে, কার দখলে রয়েছে, সে বিষয়ে সাক্ষ্য জোগাড় করা ছিল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। অনেক সময় প্রতিবেশী সাক্ষ্য দিতে ভয় পেতেন বা অপারগতা প্রকাশ করতেন, ফলে মামলার রায় পেতে লেগে যেত বছর বছর।

নতুন নিয়মে এসব জটিলতা দূর করা হয়েছে। এখন থেকে প্রয়োজনে সাক্ষীর মৌখিক বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে তার সম্মতি সাপেক্ষে তা আদালতে দাখিল করলেই চলবে। সাক্ষীকে সরাসরি আদালতে হাজির করানোর প্রয়োজন নেই। এতে সাক্ষ্য প্রমাণের প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ ও সাশ্রয়ী হলো।

ইলেকট্রনিক সমনই যথেষ্ট

আরেকটি বড় পরিবর্তন এসেছে মামলার বিবাদী পক্ষকে সমন পাঠানো পদ্ধতিতে। আগে কাগজে ছাপা সমন ঠিকঠাক হাতে পৌঁছায় না কিংবা বিবাদী তা গ্রহণ না করায় মামলা দীর্ঘায়িত হতো। এখন থেকে মোবাইলে মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ বা ই-মেইল এর মাধ্যমেও সমন পাঠানো যাবে। আদালত সন্তুষ্ট হলে এটি প্রামাণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

দ্রুত রায়, ত্বরিত বাস্তবায়ন

বেদখল জমির মামলায় আগের মতো আলাদা করে রায় বাস্তবায়নের জারি মামলা করতে হবে না। আদালত রায় ঘোষণার সঙ্গেসঙ্গেই স্থানীয় ভূমি অফিস, পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে পারবেন।

জমিতে হুলিয়া জারির মাধ্যমে সরাসরি গিয়ে আদালতের আদেশ কার্যকর করা হবে। প্রতীকীভাবে ঢোলবাদক, ভূমি কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে জমি হস্তান্তর হবে। কেউ বাধা দিলে তাঁর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সময়সীমার মধ্যেই নিষ্পত্তি

এখন থেকে মামলার শুনানিতে দুই পক্ষ সর্বোচ্চ চারবার সময় নিতে পারবে—বাদী ও বিবাদী উভয়েই দুইবার করে। অতিরিক্ত সময় পেতে হলে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে। ফলে বছরের পর বছর ঝুলে থাকা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভব হবে।

বিচার ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন

নতুন এই আইন সংশোধনের ফলে বেদখল জমির মালিকদের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে। শুধুমাত্র দলিলের ভিত্তিতে এখন সহজেই আদালতের মাধ্যমে নিজের জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এতে কমবে হয়রানি, সময় ও অর্থ ব্যয়। সব মিলিয়ে বিচার ব্যবস্থায় এটি এক বড় সংস্কার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আপনার জমি যদি বেদখল হয় এবং প্রয়োজনীয় দলিল থাকে, তাহলে এখনই আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে আপনার সম্পত্তির দখল ফিরে পাওয়ার উপযুক্ত সময়।

সূত্রঃ https://youtu.be/EMO0HtJ2RPY?si=LSx15swA6lqs60Hm

ইমরান

×