
ছবি: প্রতীকী
বছর ধরেই পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীদের মুগ্ধ করেছে এক প্রশ্ন—আমাদের সৌরজগতের কোথাও লুকিয়ে আছে কি সত্যিই নবম গ্রহ? এবং যদি থাকে, তাহলে আমরা কীভাবে তাকে খুঁজে পেতে পারি?
রাইস ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক বলছেন, নতুন অনুসন্ধানে প্ল্যানেট নাইন-এর অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে। তাদের জটিল সিমুলেশন অনুযায়ী, সৌরজগতের কোথাও এই গ্রহের মতো বস্তু থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৪০ শতাংশ। আর যদি সত্যিই থাকে, তাহলে সেটি খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরি।
চিলির এক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই অবজারভেটরিতে রয়েছে এখন পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে বড় ক্যামেরা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটি প্রথম ছবি পাঠাতে শুরু করবে। গবেষকরা বলছেন, ‘এর অতুলনীয় ক্ষমতা দিয়ে গভীর ও অতি সূক্ষ্মভাবে আকাশ পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে। এটি আমাদের সৌরজগতের দূরবর্তী বস্তুগুলো খুঁজে বের করার সম্ভাবনা অনেক বাড়িয়ে দেবে। অতএব, প্ল্যানেট নাইন আবিষ্কার হওয়া বা তার অস্তিত্ব বাতিল করার প্রমাণ পাওয়া সম্ভব হবে।’
প্ল্যানেট নাইন একটি কাল্পনিক গ্রহ, ২০১৬ সালে এর প্রথম ধারণা দেন ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেক-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর থেকে প্রায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি ভরের এই নেপচুন আকারের গ্রহটি প্লুটোর থেকেও অনেক দূরে, সূর্যের চারপাশে অত্যন্ত বিস্তৃত ও দীর্ঘাকৃতি কক্ষপথে ঘোরে। যদি সত্যিই থাকে, প্ল্যানেট নাইন কুইপার বেল্টের কিছু ছোটো বস্তুর অস্বাভাবিক কক্ষপথ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে।
গবেষকরা তাদের নতুন গবেষণায় প্ল্যানেট নাইন কী সত্যিই থাকতে পারে তা পরীক্ষা করেছেন। তাদের সিমুলেশন দেখায়, প্ল্যানেট নাইন-এর মতো বিস্তৃত কক্ষপথে থাকা গ্রহগুলো বিরল নয়, বরং সৌরজগতের গোড়ার দিকে অস্থিরতার স্বাভাবিক ফলাফল।
‘আমরা আসলে মহাজাগতিক একটি আর্কেডে পিনবল খেলার মত খেলা দেখছি,’ বলেছেন প্রধান গবেষক আন্দ্রে ইজিদোরো। ‘যখন দৈত্যাকার গ্রহগুলো নিজেদের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবে ধাক্কা খাচ্ছে, তখন কিছু গ্রহ তারা থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়ে।’
‘সঠিক সময় ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে, এই গ্রহগুলো সৌরজগত থেকে বেরিয়ে না গিয়ে দূর বিস্তৃত কক্ষপথে বন্দি হয়ে যায়,’ ব্যাখ্যা করেছেন সহ-গবেষক নাথান কাইব। তিনি বলেন, “এভাবে একটি গ্রহ তার মূল কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি ‘ফ্রিজেন’ অবস্থানে স্থিত থাকে।”
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সৌরজগতের গোড়ার দিকে দুটি বিশেষ অস্থিরতা ঘটেছিল— উরেনাস ও নেপচুনের বিকাশ এবং পরে গ্যাস জায়ান্টদের মধ্যে সংঘর্ষ। যার ফলে প্রায় ৪০ শতাংশ সম্ভাবনা ছিল, প্ল্যানেট নাইন-এর মতো একটি গ্রহ থাকতে পারে।
গবেষকরা এখন ভেরা সি. রুবিন অবজারভেটরির সাহায্যে প্ল্যানেট নাইন-এর অস্তিত্ব নিশ্চিত করার আশা করছেন। ‘আমরা কোথায় ও কী দেখতে হবে তা যতটা স্পষ্ট করবো, প্ল্যানেট নাইন খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা ততটাই বেড়ে যাবে,’ বলেছেন ড. ইজিদোরো।
‘এতে শুধু এই গ্রহের খোঁজই নয়, পুরো গ্যালাক্সির গ্রহতন্ত্রের গঠন ও বিকাশ সম্পর্কে নতুন জানার পথ খুলবে।’
সূত্র: ডেইলি মেইল।
রাকিব