ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আসছে গুগল পে

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৩০ মে ২০২৫

বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আসছে গুগল পে

ছবি : সংগৃহীত

বহু প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা অবশেষে অফিসিয়ালভাবে গুগলের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ব্যবহারের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। ফিনটেক খাতের একাধিক সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে জানিয়েছে, গুগল আগামী এক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশে গুগল ওয়ালেট  চালু করতে যাচ্ছে, যা সাধারণভাবে গুগল পে  নামে পরিচিত।

এই সেবার মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন একেকটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ওয়ালেটে পরিণত হবে। ফলে শপিং, এয়ার ট্রাভেল বা সিনেমার টিকিট কাটাসহ দৈনন্দিন নানা কেনাকাটায় আর “প্লাস্টিক মানি” বা কার্ড বহনের প্রয়োজন হবে না। মোবাইল ফোনেই হবে সব লেনদেন।

প্রাথমিকভাবে শুধু সিটি ব্যাংকের ভিসা ও মাস্টারকার্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ইস্যুকৃত কার্ডসহ) Google Wallet-এর সঙ্গে যুক্ত করার সুবিধা থাকবে। এরপর অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে যে কোনো NFC (Near Field Communication) সাপোর্টেড টার্মিনালে পেমেন্ট করা যাবে। তবে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্যও এই সেবা উন্মুক্ত করা হবে।

এই সংযুক্তি বাংলাদেশের ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এতদিন গুগল পে বাংলাদেশে চালু না হওয়ার মূল কারণ ছিল দেশের ব্যাংকিং অবকাঠামোর সঙ্গে গুগলের অনুপযুক্ত সমন্বয়।

গুগল-সিটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে পথচলা শুরু

NFC-ভিত্তিক পেমেন্টের চাহিদা দেশের প্রযুক্তিসচেতন শহরাঞ্চলে দ্রুত বেড়ে চলেছে, কিন্তু ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রস্তুতি তেমন এগোয়নি। এবার সেই চিত্র বদলাতে যাচ্ছে সিটি ব্যাংকের হাত ধরে। গুগলের সঙ্গে যৌথভাবে তারা এই সেবা চালুর প্রাথমিক উদ্যোগ নিচ্ছে।

এক সিনিয়র ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, “এটি শুধু খুচরা কেনাকাটা নয়, বরং পুরো ই-কমার্স অভিজ্ঞতা আরও ঝামেলাহীন করে তুলবে। অন্য ব্যাংকগুলোও যুক্ত হলে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।”

আঞ্চলিক তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে

ডিজিটাল পেমেন্টে ভারতের অগ্রগতি বাংলাদেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ভারতে মোট ডিজিটাল লেনদেনের ৯৩% ছিল UPI (ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস)-এর মাধ্যমে এবং তার ৫১% আর্থিক পরিমাণ ও ৩৭% লেনদেনের সংখ্যা ছিল গুগল পে-র মাধ্যমে সম্পন্ন।

এই ধারা শুধু ভারতে সীমাবদ্ধ নয়। ২০২৫ সালের ১২ মার্চ পাকিস্তানেও গুগল পে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। যদিও এখনও দেশটির বিস্তারিত লেনদেন তথ্য প্রকাশিত হয়নি, তবু এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই গুগল পে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি লাগবে কি?

শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, গুগল ওয়ালেট নিজে কোনো ব্যবহারকারীর আর্থিক তথ্য সংরক্ষণ করে না। কার্ড সংযুক্ত করলেই লেনদেন হবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে। ফলে এই অ্যাপ চালুর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সরাসরি অনুমতি প্রয়োজন পড়ছে না। তবে, ব্যাংকগুলোকে গুগল পে সেবা চালুর আগে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে।

গুগল কি লেনদেন ফি নেবে?

সাধারণত গুগল ওয়ালেটের মাধ্যমে ইন-স্টোর পেমেন্ট, অনলাইন লেনদেন বা ব্যাঙ্ক সংযুক্ত পিয়ার-টু-পিয়ার ট্রান্সফারে আলাদা কোনো চার্জ নেই। তবে ব্যাংকগুলো তাদের নীতিমালা অনুসারে ভিন্নধর্মী লেনদেন বা আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে হলে কিছু ফি ধার্য করতে পারে — সাধারণত ১% থেকে ৩% পর্যন্ত।

বাংলাদেশে স্থানীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে এই ধরনের ফি আরোপের সম্ভাবনা কম — যদি না লেনদেন আন্তর্জাতিক সার্ভারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।

বর্তমান লেনদেন পরিস্থিতি ও স্থানীয় এমএফএস অবস্থান

বাংলাদেশে বর্তমানে bKash, Rocket, Upay-এর মতো মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) ব্যাপক জনপ্রিয়। পাশাপাশি অনলাইন লেনদেনে ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারও প্রচলিত।

bKash-এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “গুগল পে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম হলেও স্থানীয় এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি level playing field থাকা জরুরি। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম সীমিত ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।”

প্রতিদিন গড়ে ১.৫ কোটি লেনদেন পরিচালনা করে দেশের সর্ববৃহৎ এমএফএস হিসেবে bKash এর উদ্বেগ যৌক্তিক, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

সানজানা

×