ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৫ বছর ধরে রাস্তাবঞ্চিত, এখন পুরোপুরি অবরুদ্ধ রাস্তাহীন শতাধিক মানুষ

সাকিব আল হাসান নাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, জামালপুর

প্রকাশিত: ০২:০০, ৩১ মে ২০২৫

৫ বছর ধরে রাস্তাবঞ্চিত, এখন পুরোপুরি অবরুদ্ধ রাস্তাহীন শতাধিক মানুষ

জামালপুরের মাদারগঞ্জ নামেই প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, বাস্তবে নাগরিক সেবা যেন কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ।
এ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষুদ্র জোনাইল এলাকার অন্তত ২০টি পরিবার গত ১৫ বছর ধরে রাস্তা ছাড়া বসবাস করছে। সম্প্রতি একমাত্র বিকল্প চলাচলের পথটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব পরিবার এখন কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষুদ্র জোনাইল এলাকার ২০-২৫টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতেন। তবে ব্যক্তি মালিকানাধীন সেই পথ সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়ায় চলাচলের সব পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে।
এতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ শতাধিক মানুষ। রিকশা-ভ্যান বা ব্যক্তিগত গাড়ি তো দূরের কথা, জরুরি প্রয়োজনে হেঁটে চলাও এখন প্রায় অসম্ভব।

ওই এলাকার অবরুদ্ধ পরিবারের মধ্যে একজন ফজলু মিয়া প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলে অভাবের সংসার। রাস্তা না থাকায় ভ্যানটি কয়েকদিন ধরে পড়ে রয়েছে তার উঠানে। এতে বন্ধ হয়েছে তার রোজগার।এ নিয়ে ভুক্তভোগী ভ্যানচালক ফজলু মিয়া বলেন, "যে সরু পথ দিয়ে কোনো রকমে ভ্যানগাড়ি বের করতাম, সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ভ্যান চালাতে পারছি না। সংসারে খাবার নেই, সন্তানদের মুখে তুলে দেওয়ার মতো কিছু নেই।"

আরেক বাসিন্দা বেলু বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "পৌরসভায় বছরের পর বছর ট্যাক্স আর ভ্যাট দিচ্ছি। অথচ আমাদের একটা চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত নেই। কেউ মারা গেলে লাশ বের করব কোন পথে? এ কেমন পৌরসেবা?"

স্থানীয়দের অভিযোগ, বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, পানি নেমে যাওয়ার কোনো নিষ্কাশন ব্যবস্থা নেই। আবার শুষ্ক মৌসুমে ধুলায় ভরে যায় চারপাশ। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা নিয়ে পৌরসভার কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল মেলেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা বজলুর রশিদ বলেন, "সারা জীবন ট্যাক্স দিয়েছি, কিন্তু কোনো সুবিধা পাইনি। রাস্তা নেই, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। নাগরিক সুবিধা কাগজে আছে, বাস্তবে নেই।"

এসব নিয়ে পাশ্ববর্তী এলাকার কয়েকজন বলেন, পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েও নাগরিক সুবিধা থেকে এমন বঞ্চনার শিকার হওয়া বর্তমান সময়ে দৃষ্টান্তমূলক। তারা প্রশ্ন তুলছেন, নাগরিক হিসেবে নিয়মিত কর দেওয়া সত্ত্বেও যদি চলাফেরার মৌলিক অধিকারটুকু না থাকে, তবে এই পৌরসভার অস্তিত্বই বা কী কাজে?

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নাদির শাহ বলেন, "পৌরসভা রাস্তা নির্মাণ করতে পারে, তবে জমি কিনে দিতে পারবে না। সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। তবে সব সমস্যা একসঙ্গে সমাধান সম্ভব নয়।"

তবে স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের এই মন্তব্য দায়সারা ও হতাশাজনক। দীর্ঘদিন ধরে একই সমস্যায় ভুগতে থাকা নাগরিকরা চায়, দ্রুত স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক। প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে হলেও একটি চলাচলের পথ তৈরি করতে হবে।

রাজু

×