ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঘুমানোর সময় আপনার মুখে হেঁটে বেড়ায় আট পা বিশিষ্ট হাজারো পোকা!

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১ জুন ২০২৫

ঘুমানোর সময় আপনার মুখে হেঁটে বেড়ায় আট পা বিশিষ্ট হাজারো পোকা!

ছবি: সংগৃহীত

আপনি প্রতিদিন রাতের ঘুমোতে যেতেই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে, আপনি একা নন। কারণ আপনার মুখমণ্ডলের ত্বকের ছিদ্রগুলো থেকে হাজার হাজার আট পা বিশিষ্ট ছোট্ট পোকার দল বেরিয়ে আসে পার্টি করতে।

এই ছোট্ট পোকার নাম ডিমোডেক্স মাইটস (Demodex mites)। আপনি দেখতে বা অনুভব করতে পারবেন না, তবে প্রায় সকল প্রাপ্তবয়স্কের শরীরে এই মাইটস থাকে। আকারে তারা একেবারে ক্ষুদ্র, মাত্র ০.১৫ থেকে ০.৪ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের। তারা মূলত চুলের গোড়ার কাছাকাছি বাস করে এবং সেখানে থাকা তেলের ওপর জীবনধারণ করে।

ইংল্যান্ডের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনভার্টিব্রেট বায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক আলেহান্দ্রা পেরোত্তি বলেন, ‘আমরা যখন ঘুমাচ্ছি, তখন তারা বের হয়ে আসে, খুব খুশি থাকে, যুগলবন্দী হয়, আত্মীয়দের দেখাশোনা করে, আমাদের মুখের উপর হেঁটে বেড়ায়। আমরা চোখ খুলতেই তারা আবার ছিদ্রে ফিরে যায়।’

পেরোত্তি আরও বলেন, ‘ভয় পাবেন না। ডিমোডেক্স মাইটস সাধারণত আমাদের বন্ধু, শত্রু নয়।’

আমাদের শরীরের মেলাটোনিন হরমোন, যা আমাদের ঘুমাতে সাহায্য করে, তা মাইটসের জন্য শক্তির উৎস। আর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি তাদের DNA ধ্বংস করার কারণে তারা সূর্যের আলো এড়িয়ে চলে, যেমন ক্ষুদ্রতম ভ্যাম্পায়ারের মতো।

কতগুলো থাকে মুখে?

প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে গড়ে পাঁচটি মাইট থাকতে পারে, তবে সাধারণ চোখে দেখা যায় না। যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়, তখন মাইটের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ত্বক ও চোখের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কখন হয় সমস্যা?

ডিমোডেক্স মাইটস রাতারাতি বেড়ে ডিমোডিকোসিস নামক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, জানালেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রিচার্ড লকসলি। বয়স বাড়া বা কেমোথেরাপি নেয়া মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

ডিমোডেক্সের কারণে ত্বকে প্রদাহ হতে পারে, যা রোসেসিয়া, ব্রণ, ত্বক শুষ্কতা ও ফেটে যাওয়ার মতো লক্ষণ সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গাল, কপাল ও তেল জমা হয় এমন স্থানগুলোতে।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা মাইটসের উপস্থিতি পরীক্ষা করতে ত্বকের ওপর থেকে নমুনা নিয়ে মাইক্রোস্কোপে দেখেন। চোখের পরীক্ষায় পাতা-ভ্রূমার গোড়ায় মাইটের ডিম ও বর্জ্য দেখে চুলকানি ও ঘুণপোকার মত সমস্যা নির্ণয় করা হয়।

কীভাবে প্রতিরোধ ও চিকিৎসা করবেন?

সাধারণ সুস্থ মানুষের জন্য চিন্তার কারণ নেই। লকসলি বলেন, ‘অনেকেই মাইটস থাকার কথা জানেন না, এবং এভাবেই থাকাই ভালো। বেশি খোঁজাখুঁজি করলে সমস্যা বাড়তে পারে।’

সুতরাং, রাতে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করা, মেকআপ ও নকল চোখের পাতাগুলো তুলে ফেলা গুরুত্বপূর্ণ। ব্রণ আক্রান্তদের মাঝে সপ্তাহে এক-দুই রাত টপিক্যাল রেটিনয়েড ব্যবহার করতে বলা হয়, তবে মাত্রা বজায় রাখা জরুরি।

ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা বা অতিরিক্ত তেলের কারণে মাইটসের বৃদ্ধি হতে পারে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম ত্বকের তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ডিমোডিকোসিসের চিকিৎসায় ডার্মাটোলজিস্টরা আইভারমেকটিন ক্রিম বা ওষুধ দেন। ২০২৩ সাল থেকে FDA অনুমোদিত মাইটসজনিত চোখের প্রদাহের জন্য মেডিকেটেড আই ড্রপসও ব্যবহার করা হচ্ছে।

 

তথ্যসূত্র: সিএনএন।

রাকিব

×