ছবি: সংগৃহীত
হাঁটাহাঁটি, দৌড়ানো, অতিরিক্ত কাজ বা এমনকি ভুল ভঙ্গিতে বসার কারণেও পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। মাংসপেশির এই ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হতে পারে অথবা ধীরে ধীরে বাড়তে পারে। কিন্তু চিন্তার কিছু নেই, কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই ব্যথা উপশম করা সম্ভব।
পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথার কারণ কী?
পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথার কয়েকটি সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:
- অতিরিক্ত ব্যবহার বা ক্লান্তি: দীর্ঘক্ষণ হাঁটা, দৌড়ানো, বা ভারী কাজ করার ফলে মাংসপেশিতে ক্লান্তি জমে ব্যথা হতে পারে।
- মাংসপেশির টান বা মচকে যাওয়া: হঠাৎ করে ভুল নড়াচড়া বা আঘাতের কারণে মাংসপেশিতে টান পড়তে পারে বা মচকে যেতে পারে।
- ডিহাইড্রেশন: পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করলে মাংসপেশিতে টান ধরতে পারে বা ব্যথা হতে পারে।
- পুষ্টির অভাব: পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বা ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থের অভাবে মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প বা ব্যথা হতে পারে।
- রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হলে মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে।
- শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না, তাদের মাংসপেশি দুর্বল থাকে এবং সহজেই ব্যথা হতে পারে।
ব্যথা উপশমে কী করবেন?
পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা হলে প্রাথমিকভাবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে আরাম পেতে পারেন:
১. বিশ্রাম: ব্যথা হলে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিশ্রাম নেওয়া। যে পায়ে ব্যথা হচ্ছে, সেটির উপর চাপ কমানো দরকার। অতিরিক্ত নড়াচড়া বা ভারি কাজ এড়িয়ে চলুন যাতে মাংসপেশি সেরে ওঠার সময় পায়।
২. ঠান্ডা ও গরম সেঁক: ব্যথা শুরুর প্রথম ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঠান্ডা সেঁক (যেমন আইস প্যাক) ব্যবহার করুন। এটি ফোলা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে। একটি পাতলা কাপড়ে বরফ মুড়িয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে আক্রান্ত স্থানে লাগান। ৪৮ ঘণ্টা পর বা যদি ব্যথা ক্রনিক হয়, তাহলে গরম সেঁক (যেমন হট ওয়াটার ব্যাগ বা গরম জলে ভেজানো তোয়ালে) ব্যবহার করতে পারেন। গরম সেঁক রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে মাংসপেশিকে শিথিল করতে সাহায্য করে।
৩. হালকা স্ট্রেচিং: ব্যথা কিছুটা কমলে হালকা স্ট্রেচিং শুরু করতে পারেন। ধীর এবং নিয়ন্ত্রিত স্ট্রেচিং মাংসপেশির টান কমাতে এবং নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে, ব্যথা পেলে স্ট্রেচিং বন্ধ করুন। জোর করে স্ট্রেচিং করলে ব্যথা বাড়তে পারে।
৪. ম্যাসেজ: আক্রান্ত মাংসপেশিতে হালকা হাতে ম্যাসেজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং মাংসপেশি শিথিল হয়, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আপনি নিজেই হালকাভাবে ম্যাসেজ করতে পারেন অথবা কাউকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন।
৫. পর্যাপ্ত জল পান: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে মাংসপেশিতে ক্র্যাম্প হওয়ার প্রবণতা কমে এবং মাংসপেশি সুস্থ থাকে। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস জল পান করার চেষ্টা করুন।
৬. সঠিক পুষ্টি: আপনার খাদ্যাভ্যাসে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন। কলা, সবুজ শাক-সবজি, বাদাম, বীজ এবং দুগ্ধজাত পণ্য এই খনিজগুলোর ভালো উৎস। এই পুষ্টি উপাদানগুলো মাংসপেশির সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য।
৭. উচ্চতা বাড়ানো (Elevation): যদি পায়ে ফোলা থাকে, তাহলে শোবার সময় বা বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে পারেন। একটি বালিশের উপর পা রেখে উঁচু করে রাখা ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
বেশিরভাগ মাংসপেশির ব্যথা ঘরোয়া পদ্ধতিতে কমে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:
- যদি ব্যথা খুব তীব্র হয় এবং ঘরোয়া পদ্ধতিতে না কমে।
- যদি ব্যথার সাথে পা ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় বা উষ্ণ অনুভূত হয়।
- যদি ব্যথার কারণে হাঁটতে বা ওজন বহন করতে অসুবিধা হয়।
- যদি ব্যথা কয়েকদিনের বেশি স্থায়ী হয় বা বারবার ফিরে আসে।
- যদি ব্যথার সাথে জ্বর বা অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গ থাকে।
নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক ওয়ার্ম-আপ এবং কুল-ডাউন, পর্যাপ্ত জল পান এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস মাংসপেশির ব্যথা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখলে আপনার পায়ের মাংসপেশি সুস্থ থাকবে এবং ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করবে।
তথ্যসূত্র:
- স্বাস্থ্য বার্তা (Healthline): পায়ের মাংসপেশির ব্যথার কারণ ও প্রতিকার (অনুবাদিত)
- মায়ো ক্লিনিক (Mayo Clinic): মাংসপেশির ব্যথার প্রাথমিক চিকিৎসা (অনুবাদিত)
- ওয়েবএমডি (WebMD): মাংসপেশির ব্যথার ঘরোয়া প্রতিকার (অনুবাদিত)
সাব্বির
