ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আপনার বাসার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আপনারা ভূমিকা

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ২ জুন ২০২৫

আপনার বাসার বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আপনারা ভূমিকা

ছবি: সংগৃহীত

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা অজান্তেই প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য তৈরি করি। খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিকের বোতল, কাগজের প্যাকেট, কাঁচের ভাঙা টুকরা – এমন আরও কত কী! এই সব গৃহস্থালি বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে তা আমাদের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভূমিদূষণ, জলদূষণ, বায়ুদূষণ এমনকি জনস্বাস্থ্যের জন্যও এটি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু একটু সচেতনতা এবং কিছু সহজ পদক্ষেপের মাধ্যমেই আমরা এই সমস্যার সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারি।

গৃহস্থালি বর্জ্য কেন উদ্বেগের কারণ?

গৃহস্থালি বর্জ্যের অনুপযুক্ত ব্যবস্থাপনা কয়েকটি কারণে উদ্বেগের জন্ম দেয়:

  • ভূমিদূষণ: আবর্জনা যত্রতত্র ফেললে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং দূষিত পদার্থ ভূগর্ভস্থ জলে মিশে যায়।
  • জলদূষণ: প্লাস্টিক ও অন্যান্য কঠিন বর্জ্য নদী, খাল বা সমুদ্রের জলে মিশে জলজ প্রাণীর জীবন বিপন্ন করে তোলে এবং জলের গুণগত মান হ্রাস করে।
  • বায়ুদূষণ: আবর্জনা পোড়ানো হলে বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগের কারণ হয়।
  • রোগের বিস্তার: খোলা স্থানে বর্জ্য স্তূপ করে রাখলে মশা, মাছি এবং ইঁদুরের উপদ্রব বাড়ে, যা নানা রোগের বিস্তার ঘটায়।

আমাদের করণীয়: ৪টি ‘R’ পদ্ধতি

গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ৪টি ‘R’ পদ্ধতি অনুসরণ করা। এই ৪টি ‘R’ হলো: Reduce (কমানো), Reuse (পুনরায় ব্যবহার), Recycle (পুনর্ব্যবহার) এবং Rot (জৈব সার তৈরি)।

১. বর্জ্য কমানো (Reduce):

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো বর্জ্য তৈরি কমানো। এটি পরিবেশের উপর সবচেয়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

  • অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকুন: কেনার আগে দু’বার ভাবুন, জিনিসটি আপনার সত্যিই দরকার কিনা।
  • পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ব্যবহার করুন: বাজার বা দোকানে গেলে প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে পাটের বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করুন।
  • প্লাস্টিকের বোতল ও কাপের ব্যবহার কমান: নিজের জলের বোতল বা কফি কাপ ব্যবহার করুন।
  • অতিরিক্ত প্যাকেজিং এড়িয়ে চলুন: এমন পণ্য কিনুন যাতে প্যাকেজিং কম থাকে।

২. পুনরায় ব্যবহার (Reuse):

যেসব জিনিস একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়, সেগুলোকে ভিন্ন উপায়ে আবার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

  • কাঁচের জার বা বোতল সংরক্ষণ করুন: এগুলো মসলা, আচার বা ছোটখাটো জিনিস রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • পুরনো জামাকাপড় দান করুন বা অন্য কাজে লাগান: পুরনো কাপড় দিয়ে ঘর মোছার ন্যাকড়া তৈরি করা যেতে পারে।
  • প্লাস্টিকের কন্টেইনার ব্যবহার করুন: খাবার রাখার জন্য বা ছোট জিনিস গোছানোর জন্য ব্যবহার করুন।
  • উপহার সামগ্রীর মোড়ক বা ব্যাগ পুনরায় ব্যবহার করুন।

৩. পুনর্ব্যবহার (Recycle):

যেসব বর্জ্য পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব নয়, সেগুলোকে পুনর্ব্যবহারের জন্য আলাদা করে ফেলুন।

  • আলাদা বর্জ্য পাত্র ব্যবহার করুন: ভেজা বর্জ্য (খাবারের উচ্ছিষ্ট) এবং শুকনো বর্জ্য (প্লাস্টিক, কাগজ, কাঁচ, ধাতু) আলাদা আলাদা পাত্রে রাখুন।
  • পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহকারীকে দিন: আপনার এলাকায় যদি পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করার ব্যবস্থা থাকে, সেখানে সেগুলো জমা দিন।
  • প্লাস্টিক, কাগজ, কাঁচ ও ধাতুকে আলাদা করুন: প্রতিটি উপাদানকে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করলে পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়া সহজ হয়।

৪. জৈব সার তৈরি (Rot/Compost):

খাবারের উচ্ছিষ্ট, শাক-সবজির খোসা, এবং অন্যান্য পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে জৈব সার তৈরি করা যায়।

  • কম্পোস্ট পিট বা বিন তৈরি করুন: বাড়ির উঠানে বা বারান্দায় ছোট একটি কম্পোস্ট বিন তৈরি করে খাবারের উচ্ছিষ্ট, গাছের পাতা এবং অন্যান্য জৈব বর্জ্য জমা করতে পারেন।
  • জৈব সার ব্যবহার করুন: তৈরি হওয়া জৈব সার আপনার বাগানের গাছপালা বা টবের গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায় এবং মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

চূড়ান্ত কথা

গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত দায়িত্ব। ছোট ছোট এই পদক্ষেপগুলো সম্মিলিতভাবে পরিবেশের উপর বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের চারপাশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি এবং একটি সুস্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ পৃথিবী তৈরি করি। আমাদের সচেতনতাই পারে এই সমস্যার সমাধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে।

তথ্যসূত্র:

  • জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UN Environment Programme - UNEP): বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং এর পরিবেশগত প্রভাব সংক্রান্ত তথ্য।
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization - WHO): বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জনস্বাস্থ্যগত দিক।

সাব্বির

×