
ছবিঃ সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে ফোন চুরি নিয়ন্ত্রণে কী করণীয় তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি দুই জায়ান্ট—অ্যাপল ও গুগলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।
লন্ডনের পুলিশের জেমস কনওয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি কমিটিকে জানান, লন্ডনে চুরির দুই-তৃতীয়াংশই এখন মোবাইল ফোন সংক্রান্ত। চুরির সঙ্গে ছুরি হামলার সম্পর্ক প্রায় ৭০%, ফলে মোবাইল ফোন চুরি শহরের সহিংসতার একটি বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মেট পুলিশের দাবি, ফোনগুলোতে থাকা বিশেষ আইডেন্টিফায়ার নাম্বার আইএমইআই (IMEI) ব্যবহার করে চোরাই ফোনগুলো ব্লক করা উচিত। তবে বাজারের প্রধান দুই প্রতিষ্ঠান অ্যাপল ও গুগল এই ধারণার বিরুদ্ধে যুক্তি তুলেছেন।
অ্যাপলের আইন বিষয়ক প্রধান গ্যারি ডেভিস কমিটিকে বলেন, “শুধুমাত্র আইএমইআই ব্লকিং’তে সমস্যা পুরোপুরি সমাধান হবে না। আমাদের উদ্বেগ রয়েছে যে কেউ নিজের দাবি করে ফোনের মালিকত্ব দাবি করলে প্রতারণার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।”
বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ফোন নেটওয়ার্কগুলো চোরাই ফোনগুলোকে আইএমইআই দিয়ে ব্লক করে, কিন্তু বৈশ্বিক পর্যায়ে তা প্রযোজ্য নয়। এর ফলে অপরাধীরা নিরাপত্তা পেরিয়ে অন্য দেশে চোরাই ফোন ব্যবহার করতে পারে।
ডেভিস আরও জানান, ফোন মালিকরা প্রতি মাসে হাজারের অধিকবার সাইবার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, যা অনেক সময় ব্ল্যাকমেইল বা ক্ষতিকারক উদ্দেশ্য নিয়ে হয়ে থাকে। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ের সাথে তৈরি হওয়া অভিজ্ঞতা এই ক্ষেত্রের আক্রমণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।”
গত ১২ মাসে গুগল ও অ্যাপল চুরির বিরুদ্ধে কিছু নতুন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য চালু করেছে—অ্যাপল Stolen Device Protection এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড Theft Detection Lock।
পুলিশ দাবি করেছেন, ৭৫% চোরাই ফোন বিদেশে পাঠানো হয়, যার মধ্যে ২৮% চীন ও হংকংয়ে যায়। মেট পুলিশের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড্যারেন স্কেটস বলেছেন, “আমরা ক্লাউড প্রদানকারীদের চাইছি যেন তারা হারানো বা চোরাই ফোনকে তাদের সার্ভিসে সংযোগ করতে না দেয়। এর জন্য পুলিশের হস্তক্ষেপের প্রয়োজনও নেই।”
তবে অ্যাপল ও গুগল এখনও এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে কমিটির কিছু সদস্যের অভিযোগ। লিবারাল ডেমোক্র্যাট এমপি মার্টিন রিগলি বলেন, “তুমি চাইলে আগামীকালই আইএমইআই ব্লকলিস্টে থাকা ফোনগুলো সার্ভিস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারো, কিন্তু করছ না।”
গুগলের সফটওয়্যার প্রকৌশলী সাইমন উইংগ্রোভ বলেন, “আইএমইআই ডাটাবেস পরিচালনা করে নেটওয়ার্ক ক্যারিয়াররা। এটি পরিবর্তন বা অন্যদের জন্য ব্যবহৃত করার জন্য পুরো শিল্পক্ষেত্রের সম্মতি দরকার।”
তিনি বলেন, “আমরা অ্যান্ড্রয়েডের ফ্যাক্টরি রিসেট প্রোটেকশনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, যা চোরদের জন্য ফোন রিসেট করা কঠিন করবে।”
অ্যাপল আইডি ভিত্তিক Activation Lock ফিচারটির প্রশংসাও করেন ডেভিস। এটি চোরদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা, কারণ এটি ফোনের কিছু অংশ ব্যবহার করতে মালিকের পাসওয়ার্ড চাই।
তবে এমপি চি অনওরাহ বলছেন, “আমরা মনে করি গুগল ও অ্যাপলের কাছে ফোন চুরি প্রতিরোধে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেই।”
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, আইএমইআই ব্লকিং নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠান যথেষ্ট দ্রুততা দেখাচ্ছে না। কনজার্ভেটিভ এমপি কিট মলথাউস বলেন, “তারা অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে।”
গ্যারি ডেভিস বলেন, “আইএমইআই ব্লকিং হতে পারে পরবর্তী ধাপ, তবে তার আগে পুলিশের ঐতিহ্যবাহী কাজের গুরুত্ব অপরিসীম।”
এই বিতর্ক চলাকালীন পুলিশ ও এমপিরা আশা প্রকাশ করেছেন, প্রযুক্তি জায়ান্টরা চোরাই ফোনের বাজার ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
ইমরান