
ছবি: প্রতীকী
ইউরিক অ্যাসিড আমাদের দেহের একটি স্বাভাবিক বর্জ্য পদার্থ, যা পিউরিন নামক উপাদান ভেঙে তৈরি হয়। এই পিউরিন কিছু খাবারে যেমন—ডাল, পালং শাক ইত্যাদিতে পাওয়া যায়, আবার শরীরের ভেতরেও তৈরি হয়। সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড রক্তে মিশে কিডনির মাধ্যমে মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় এবং কিডনি তা বের করে দিতে ব্যর্থ হয়, তখন ‘হাইপারইউরিসেমিয়া’ নামে একটি অবস্থা তৈরি হয়। এর ফলেই হয় গাউট—এক ধরনের যন্ত্রণাদায়ক গাঁটে ব্যথা, এমনকি কিডনিতে পাথরও হতে পারে।
কেন ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ জরুরি?
অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীরে জমে গিয়ে জোড়ায় জোড়ায় ধারালো স্ফটিক তৈরি করে, যা ভয়ানক ব্যথার সৃষ্টি করে। তাই খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কিছু নির্দিষ্ট খাবার বাদ দিলে ইউরিক অ্যাসিড কমে আসে, গাঁটের ব্যথাও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিচে এমন ৬টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে একেবারেই এড়িয়ে চলা উচিত।
১. অর্গান মিট (যেমন কলিজা, কিডনি, মগজ)
অর্গান মিট বা প্রাণীর অভ্যন্তরীণ অঙ্গের মাংসে থাকে উচ্চমাত্রার পিউরিন। এটি ইউরিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তে এর মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। নিয়মিত এসব খেলে গাউটের ব্যথা বেড়ে যেতে পারে। যাদের ইউরিক অ্যাসিড আগে থেকেই বেশি, তাদের এই ধরনের মাংস একেবারেই বর্জন করা উচিত।
২. পনির ও ফুল-ফ্যাট ডেইরি
যদিও এগুলো নিরামিষভোজীদের খাদ্য, তবুও ফুল-ফ্যাট দুধ ও দুধজাত খাবারে থাকে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা কিডনির ইউরিক অ্যাসিড নির্গমনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ফুল-ক্রিম দুধ বা পনিরের বদলে স্কিমড দুধ, লো-ফ্যাট দই বা ছানা খাওয়া যেতে পারে।
৩. সি-ফুড (যেমন চিংড়ি, সার্ডিন, টুনা)
কিছু সামুদ্রিক মাছ ও খাবারে পিউরিনের পরিমাণ খুব বেশি। এটি নিয়মিত খেলে ইউরিক অ্যাসিড জমে গিয়ে গাউটের প্রকোপ বাড়াতে পারে। যাদের ইউরিক অ্যাসিড বেশি, তাদের জন্য সামুদ্রিক খাবার সীমিত করে খাওয়াই নিরাপদ। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিকল্প প্রোটিন বেছে নেওয়া উচিত।
৪. চিনি-মেশানো পানীয় (সফট ড্রিংকস, প্যাকেটজুস)
ফ্রুক্টোজযুক্ত পানীয় শরীরের পিউরিন বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে ইউরিক অ্যাসিডের উৎপাদন বাড়ায়। ফলে কোমল পানীয় ও মিষ্টি ফলের রস নিয়মিত পান করলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে। এদের বদলে পান করতে হবে বিশুদ্ধ পানি, লেবুপানি বা আনস্যুইটেন্ড হারবাল চা।
৫. অ্যালকোহল
অ্যালকোহল শরীরে ইউরিক অ্যাসিড তৈরিতে সহায়তা করে এবং কিডনির মাধ্যমে তা বের করতেও বাধা দেয়। একদিকে এটি উৎপাদন বাড়ায়, অন্যদিকে নির্গমন বন্ধ করে—ফলে এটি গাউটের প্রধান কারণগুলোর একটি। তাই যাদের ইউরিক অ্যাসিড বা গাঁটের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়াই শ্রেয়।
৬. পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট (যেমন সাদা পাউরুটি, পাস্তা, মিষ্টি পেস্ট্রি)
এই ধরনের খাবার রক্তে চিনি দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে। এর ফলে কিডনি ইউরিক অ্যাসিড ঠিকভাবে ছেঁকে ফেলতে পারে না। তাই এইসব খাবার বাদ দিয়ে চিনি ও ময়দাবিহীন কম্প্লেক্স কার্বস যেমন—লাল আটার রুটি, ওটস, বাদামি চাল ইত্যাদি গ্রহণ করা উচিত।
নিয়ন্ত্রতি খাদ্যাভ্যাস মানেই সুস্থ জীবন
ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র হচ্ছে—খাবারের তালিকা থেকে কিছু জিনিস বাদ দেওয়া। পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার ও উচ্চ ফ্রুক্টোজযুক্ত পানীয় বাদ দিলে গাউট অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর, ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ, পরিমিত পানি পান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললেই এই ব্যথাদায়ক সমস্যা থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব