ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১০২ বছর বয়সেও কর্মরত ডাক্তার! জানালের দীর্ঘ জীবনের ৪টি চমকপ্রদ রহস্য

প্রকাশিত: ০৮:২৫, ৪ জুন ২০২৫

১০২ বছর বয়সেও কর্মরত ডাক্তার! জানালের দীর্ঘ জীবনের ৪টি চমকপ্রদ রহস্য

ছবি: সংগৃহীত

১০২ বছর বয়সে যেখানে অনেকেই স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়েন, সেখানে ডা. হাওয়ার্ড টাকার আজও নিয়মিত হাসপাতালে যান, ছাত্রদের শেখান, প্রযুক্তি শেখেন এবং সবচেয়ে বড় কথাজীবনকে নিয়ে কৌতূহলী থাকেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুসারে তিনি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক সক্রিয় চিকিৎসক।

তাঁর দীর্ঘজীবনের পেছনে জাদুকরি কোনো ডায়েট বা ব্যায়াম নেইআছে জীবনের প্রতি এক গভীর উপলব্ধি, যা তিনি শেয়ার করেছেন চারটি সহজ অথচ শক্তিশালী জীবনদর্শনের মাধ্যমে।

১. অবসর নয়, জীবনের উদ্দেশ্যই আসল

‘রিটায়ারমেন্ট মানেই মৃত্যু কাছাকাছি চলে যাওয়া’এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন ডা. টাকার।

অনেকেই অবসরের স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু ডা. টাকার আজও কাজ করছেন। তাঁর মতে, জীবনের একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকলে মন ও মস্তিষ্ক তরতাজা থাকে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য যদি কোনো কারণ না থাকে, তাহলে জীবন ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যায়।

এটি শুধু অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন না তিনি। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাও তাঁর কথা প্রমাণ করে। হেলথ সাইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের জীবনে উদ্দেশ্য থাকে, তারা গড়পড়তা মানুষের চেয়ে দীর্ঘজীবী হন।

২. মস্তিষ্ক যতই বুড়িয়ে যাক, শেখা থামালে চলবে না

৯০ বছর বয়সে নতুন কিছু শেখা কঠিনএ কথা স্বীকার করেন ডা. টাকার নিজেই। কিন্তু শেখা বন্ধ করলে মস্তিষ্ক থেমে যায়, সেই বিশ্বাস তাঁকে আজও চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রযুক্তির ব্যবহার শিখেছেন, নতুন যন্ত্রপাতি রপ্ত করেছেন এমনকি নিজের নাতির সাহায্যে টিকটকও ব্যবহার করছেন! অনেক সহকর্মী যেখানে প্রযুক্তির ভয় পেয়ে আগেভাগেই অবসর নেন, সেখানে ডা. টাকার কৌতূহল তাঁকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে রেখেছে।

‘এই পৃথিবীতে থাকতে হলে পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেই হবে,’এটাই তাঁর মনোভাব।

৩. প্রফুল্ল মন, দীর্ঘজীবনের মূল চাবিকাঠি

ডা. টাকারের দীর্ঘ জীবনের গোপন রহস্য কোনো কঠিন খাদ্যতালিকা নয়। তিনি বলেন, ‘ভালোবাসায় থাকো, হাসিখুশি থেকো, ধূমপান কোরো না, ঘৃণা করো নাব্যস, এতেই হবে।’

তিনি কখনও ধূমপান করেননি, মাঝেমধ্যে অ্যালকোহল গ্রহণ করেন (শুক্রবার এক গ্লাস মার্টিনি), এবং সব খাবার খান পরিমিতভাবে। কিন্তু তিনি মনে করেন, মানসিক অভ্যাসই তাঁর শরীরের চেয়েও বেশি সুরক্ষিত রেখেছে।

‘বাড়িতে ও কাজে সুখএই দুই মিলেই জীবন সুন্দর হয়,’ বলেন তিনি।

তাঁর এক রোগীর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যিনি কাজের চাপ সামলাতে না পেরে মাত্র ৪২ বছর বয়সে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। সেই ঘটনা তাঁকে জীবনের আসল শিক্ষা দিয়েছে। তাঁর নিজের বিবাহিত জীবন প্রায় ৭০ বছরের, এখনো স্ত্রীকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করেন, ঝগড়াও করেনকিন্তু ভালোবাসা আছে আগের মতোই।

৪. মৃত্যুকে নিয়ে ভয় নয়, বরং জীবনকে উদ্‌যাপন করো

ডা. টাকারের জীবনদর্শনে এক ভয়হীন সৌন্দর্য আছে। তিনি বলেন, ‘বাঁচা মানেই জানা, একদিন মরতেই হবেতাই আমি বেঁচে থাকি।’

৮০ বছর বয়সে স্কি করতে গিয়ে ঘাড় ভেঙেছিলেন, ১০০তম জন্মদিনে করোনা হয়েছিলতবুও হাসিমুখে ফিরে এসেছেন। এখনো বাড়িতে ব্যায়াম করেন, আর বিশ্বাস করেন‘সুখ একটা পেশীর মতোনিয়মিত ব্যায়াম না করলে দুর্বল হয়ে যায়।’

ডা. হাওয়ার্ড টাকার আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেনদীর্ঘজীবন শুধু শারীরিক যত্নের ব্যাপার নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তা, ভালোবাসা, শেখার ইচ্ছা এবং জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞতার এক পরিপূর্ণ চর্চা।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×