
ছবি: জনকণ্ঠ
প্রকৃতি আমাদের চেতন ও অবচেতনের গভীরে যে শান্তি ও সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়িয়ে দেয়, তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাদান হলো আকাশ—আর সেই আকাশ যখন হয় গভীর নীল, আর তার বুকে ভেসে বেড়ায় তুলোর মতো সাদা মেঘ, তখন সেই দৃশ্য যেন রূপকথার কোনো অবাক করা ছবি।
সকালবেলায় পূর্বাকাশে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যখন সোনালি আলো নীল আকাশকে ছুঁয়ে যায়, তখন সাদা মেঘগুলো যেন আলোর খেলায় রঙ বদলাতে শুরু করে। কখনো তারা হয় হালকা গোলাপি, কখনো সোনালি, আবার কখনো শুধু নিঃশব্দে ভেসে চলে—নির্বাক, কিন্তু ভীষণ অর্থবহ। এসব মেঘ যেন আমাদের মনে প্রশ্ন তোলে—এতটা সুন্দর হতে পারে কীভাবে? আর তখনই আমরা বুঝি, প্রকৃতি কোনো সীমার মধ্যে বাঁধা নয়।
নীল আকাশ এক বিশালতা প্রকাশ করে—যেন অনন্তের প্রতীক। আর তার বুকে থাকা সাদা মেঘগুলো আমাদের স্বপ্নের মতোই, যেগুলো কখনো স্পষ্ট, কখনো অস্পষ্ট। এই মেঘগুলো আবার কখনো মনে হয় একেকটি জীবন্ত ছবি—একবার দেখলে মনে হয় পশুর আকার, পরক্ষণেই যেন পাখি হয়ে গেল, আবার খানিক পরেই মিলিয়ে গেল দূরের আলোর ভেতর।
এই রকম দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে মানুষের মন এমনিতেই শান্ত হয়ে আসে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের চোখ ও মনের সংযোগ আমাদের মানসিক চাপ কমায়, মনোযোগ বাড়ায় এবং নতুন করে ভাবার শক্তি দেয়। আর নীল আকাশ ও সাদা মেঘ সেই প্রাকৃতিক থেরাপির অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপ। শিশুদের চোখে যেমন এই আকাশ ও মেঘ আনন্দের খেলা, তেমনি প্রাপ্তবয়স্কদের চোখে এটি হয় স্মৃতির জানালা, যেখানে ফিরে আসে শৈশব, ফিরে আসে নিসর্গের টান।
বাংলা সাহিত্যে আকাশ ও মেঘ বারবার ফিরে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বহু কবিতায় মেঘের রূপ ও আকাশের বর্ণনা দিয়ে এক গভীর জীবনবোধ তুলে ধরেছেন। জীবনানন্দ দাশের কবিতায় নীল আকাশ যেন নস্টালজিয়ার প্রতীক। অন্যদিকে, আধুনিক কবিদের লেখাতেও সাদা মেঘ ও নীল আকাশ জীবনের ক্লান্তিকে অতিক্রম করার এক চিত্ররূপ হয়ে এসেছে।
কখনো যদি মন ভারাক্রান্ত হয়, বুকের ভেতর চিন্তা জমে থাকে, কিংবা নিজেকে হারিয়ে ফেলেন কোলাহলের মধ্যে—তখন একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন। এই দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশ আর শান্ত ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘ আপনার সমস্ত ভার লঘু করে দেবে। আপনি নতুন করে ভাবতে শিখবেন, শ্বাস নিতে শিখবেন প্রকৃতির রূপে।
মুমু