ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পদ্মার পাড়ে সবুজ স্বপ্ন—রাজবাড়ীর দুই যুবকের অক্সিজেন তৈরির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

মনজু শেখ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজবাড়ী

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ২৮ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:০৮, ২৮ মে ২০২৫

পদ্মার পাড়ে সবুজ স্বপ্ন—রাজবাড়ীর দুই যুবকের অক্সিজেন তৈরির ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

পরিবেশ সংরক্ষণ ও দেশের সবুজায়নের জন্য নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচি দেখা গেলেও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা এবং স্বপ্রণোদিত উদ্যোগ এখনও তেমন বেশি দেখা যায় না। তবে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন রাজবাড়ী পৌর এলাকার দুই যুবক—জমির ও ইমরান। তারা নিজেদের অর্থায়নে শুরু করেছেন এক ব্যতিক্রমী বৃক্ষরোপণ অভিযান, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে আরও সবুজ, শ্যামল এবং অক্সিজেনসমৃদ্ধ করে তোলা।

জমির ও ইমরান শুরুতেই কোনো সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা ছাড়াই নিজেদের সঞ্চয় খরচ করে এই কার্যক্রম শুরু করেছেন। রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন ফাঁকা ও অনাবাদি জায়গায় পর্যায়ক্রমে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা তাদের। শুরুটা হয়েছে রাজবাড়ী শহরের অন্যতম পর্যটন স্থান গোদার বাজার এলাকা থেকে। পদ্মা নদীর পাড় ঘেঁষে যেসব স্থান শুষ্ক, গাছপালা শূন্য এবং সৌন্দর্যহীন, সেখানে তারা প্রথমে ৫০টি গাছের চারা রোপণ করেছেন ।

তারা শুধু গাছ লাগিয়েই থেমে থাকেননি, প্রতিটি গাছকে সুরক্ষিত রাখতে বাঁশের বেড়াও দিয়েছেন, যেন প্রাণী বা মানুষের দ্বারা কোনো ক্ষতি না হয়। তাদের এই দায়িত্বশীল ও আন্তরিক প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই স্থানীয়দের নজর কেড়েছে এবং প্রশংসা অর্জন করেছে।

কেন এই পদ্মার পাড়ে গাছ লাগানো হয়েছে এই উত্তরে ইমরান খান বলেন, “একসময় গোদার বাজার এলাকায় প্রচুর মানুষের আনাগোনা ছিল। কিন্তু পরিবেশের সৌন্দর্য হারিয়ে যাওয়ায় ও প্রচণ্ড রোদের কারণে এখন অনেকেই এখানে আসতে চায় না। তাই প্রথম স্থান হিসেবে আমরা পদ্মার পাড়কেই বেছে নিয়েছি। আমরা চাই, আবার যেনো মানুষ এখানে ফিরে আসে, প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে পারে।

গোদার বাজার ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী শামীম ওসমান বলেন, জমির ও ইমরান যা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তারা শুধু গাছ লাগাচ্ছেন না, তারা পরিবেশ, সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজ করছেন। এমন মানুষই সমাজে বদল আনতে পারে।

তাদের স্বপ্ন শুধু গোদার বাজার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। সারা রাজবাড়ী জেলাজুড়ে যেসব ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানে পর্যায়ক্রমে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা তাদের। তবে এজন্য প্রয়োজন সময়, শ্রম ও অর্থ। জমির বলেন, আমরা চাই আমাদের এই উদ্যোগে সমাজের মানবিক মানুষরা পাশে থাকুক। সবাই মিলে গড়ে তুলতে চাই একটি সবুজ ও সুন্দর রাজবাড়ী।

জমির ও ইমরান আমাদের মনে করিয়ে দেন, পরিবর্তন শুরু হয় ছোট একটি পদক্ষেপ থেকে। ব্যক্তিগত চেষ্টাও একটি বৃহৎ পরিবেশবান্ধব বিপ্লবের সূচনা করতে পারে। তারা দেখিয়েছেন, ইচ্ছা আর উদ্যোগ থাকলে সবুজ স্বপ্ন বাস্তব করা অসম্ভব নয়।

রাজবাড়ীর পদ্মার পাড়ে গাছের ছায়ায় একদিন মানুষের ভিড় আবার ফিরে আসবে—এই স্বপ্নে রোপিত প্রতিটি গাছ এক একটি সম্ভাবনার বীজ। এই দুই তরুণ শুধু গাছ লাগাননি, তারা নতুন ভবিষ্যতের বীজ বুনেছেন।

নোভা

×