ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিশ্বশান্তির মঞ্চে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ২৯ মে ২০২৫

বিশ্বশান্তির মঞ্চে বাংলাদেশ

গতকাল পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। এদিন বিশ্বজুড়ে সম্মান জানানো হয় সেসব বীরকে, যাঁরা শান্তির পতাকা হাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করেছে। এবারে প্রতিপাদ্য, ‘শান্তিরক্ষার ভবিষ্যৎ’। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়। স্মরণযোগ্য, শুরু থেকে এই পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ শান্তিরক্ষী সেনা শহীদ হয়েছেন। এ বছর দুজন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। 
গৌরবের বিষয় হলো, বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। বিশ্বশান্তির মঞ্চে বাংলাদেশের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সংঘাতপূর্ণ বা গৃহযুদ্ধের শিকার, গণহত্যা বা গণনির্বাসনের ঝুঁকিতে থাকা দেশ বা অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনা, পুনর্গঠন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের প্রয়োজন। মানবিক সংকট মোকাবিলাসহ বিভিন্ন পরিস্থিতি সামাল দিতেও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে থাকে।
দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ১০টি দেশে আমাদের ৫,৮১৮ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ও কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন ৪৪৪ নারী শান্তিরক্ষী। সাহস, ত্যাগ আর গৌরবের পথরেখা ধরে বিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। ১৯৮৮ সালে ইরান ইরাকে সামরিক পর্যবেক্ষক দলে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্য পাঠানোর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপতি এক বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধপীড়িত ও সংঘাতময় দেশে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা বাণীতে বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সংঘাতময় বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জরুরি মানবিক সহায়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের কর্মদক্ষতা ও নিষ্ঠা যুদ্ধপীড়িত সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদাকে করেছে আরও সমুন্নত।  
উল্লেখ করা দরকার, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছাড়াও জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য রয়েছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ২১ হাজার ৮১৫ শান্তিরক্ষী ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে পেশাদারিত্ব ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ২৪ শান্তিরক্ষী। বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সাউথ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের ১২৮  পুরুষ ও ৭১ নারীসহ ১৯৯ শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন। দেশবাসীর প্রত্যাশা- বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বে শান্তি রক্ষাসহ মানবতার পক্ষে পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে নিরলস দায়িত্ব পালন করে স্বদেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন।

প্যানেল

×