ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আড্ডা আন্দোলন ও অনুভবের প্রতিচ্ছবি ইবির ডায়না চত্ত্বর

মো. মোসাদ্দেক হোসেন

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ৩১ মে ২০২৫

আড্ডা আন্দোলন ও অনুভবের প্রতিচ্ছবি ইবির ডায়না চত্ত্বর

১৭৫ একরে ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাস। দিনের আলোয় পুরোটা সময়ই মুখরিত থাকে এই চত্বর। শিক্ষার্থীদের অনুভতির প্রাণ কেন্দ্র, তাদের সংস্কৃতি চর্চা, বন্ধুত্বের বন্ধন, কিংবা অধিকার আদায় বা অন্যায়ের পরিপন্থী আন্দোলন- এ ক্যাম্পাসের সব কিছুর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এ চত্বরটি। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানটি। যাকে ক্যাম্পাসের প্রাণকেন্দ্র বললে খুব একটা অবাঞ্ছনীয় হবে না। বলছি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্ত্বরের কথা।
১৯৯৭ সালে ওয়েলস এর রাজকুমারী ‘ডায়না’ এর আকস্মিক মৃত্যুর পর তার স্মরণে এই চত্ত্বরটির নাম করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই প্রশাসনিক ভবন তারই ঠিক সামনের দিকটাই চোখে পড়বে এই বাহারি পাতাবাহার ও রঙিন সোনালু ফুলে সজ্জিত চত্ত্বরটি। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় দিনভর মুখর এই স্থানটিতে সবাই ক্লাস, পরীক্ষা, এ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশনের ক্লান্তি ভুলে মেতে উঠে আড্ডায়। গিটার এর টুন টুন শব্দ ও সুরের মূর্ছনা, কবিতা আবৃত্তি, পথনাটক মঞ্চায়ন, ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক বা পেশাগত সংগঠন এর মিলন মেলা, উৎসব বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ত: বিভাগীয় অনুষ্ঠান কিংবা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি রক্ষার্থে আন্দোলন সবই ঘটে থাকে এই স্থানে।
বিভিন্ন সংগঠন এর সাপ্তাহিক বা মাসিক বৈঠক, বিভিন্ন জেলা সংগঠন এর আলোচনা সভা অথবা নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠান সকল কিছুর যেন কেন্দ্রবিন্দু এই ডায়না চত্বর। সবমিলিয়ে বলা চলে স্থানটি শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে অঙ্কিত হইছে সংস্কৃতি চর্চার মূল বা শেকড় হিসেবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় এর কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান মেলা বা পিঠা উৎসব সব কিছু যেন নিতান্তই নির্জীব এই জায়গাটি ছাড়া। এই স্থানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এক অনন্য মুগ্ধকর স্থান। ক্লাসের ফাঁকে ডায়নায় বন্ধুদের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা আড্ডা ও খুনসুটিতে মেতে ওঠেন এবং নতুন করে নতুন দিন, নতুন স্বপ্ন, পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন। বলা যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবনে ডায়না চত্বর শুধু একটি স্থান বা চত্বর এর নাম নয় এটি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এর শিল্প, সংস্কৃতি, বাণিজ্য সব কিছু চর্চার প্রাণকেন্দ্র। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জায়গাটিতেই দেখা মিলে অনেক তরুণ উদ্যোক্তার। তারা পড়াশুনার পাশাপাশি কেউ শহর থেকে ভালো মানের কাপড় এনে শিক্ষার্থীদের মাঝে অল্প দামে বিক্রি করেন। কেউ মানসম্মত ফাস্টফুড আইটেম বিক্রির মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করেন। এছাড়াও বিকেল হলেই স্থানটিতে দেখা মিলে বিভিন্ন কপোত কপোতীর যারা তাদের ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, হতাশাগ্রস্থ পুরু একটা দিনের ক্লান্তি প্রিয়জনের সাথে বসে গল্পের মাধ্যমে শেষ করে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে শিক্ষার্থীরা কর্মস্থলে গিয়েও স্মরণ করেন ডায়নায় কাটানো সোনালী বিকেলগুলোর কথা। বিভিন্ন ছুটিতে বা সুযোগ পেলেই তারা ফিরে আসে ইবিতে। মুগ্ধ হয় ডায়নার ভালোবাসায়। এই ডায়না চত্বর শুধু একটি স্থান নয় এটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের স্মৃতির এক সিংহ অংশ, যেখানে গড়ে ওঠে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব, অসম্ভব ভালোবাসা, আকাশছোঁয়া স্বপ্ন আর অসংখ্য স্মৃতি।

 লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

প্যানেল

×